শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সুঁই-সুতায় স্বপ্ন পূরণের আশা

আপডেট : ২২ জুন ২০২১, ০৭:১৭

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কখনো দমিয়ে রাখতে পারে না সুপ্ত প্রতিভা ও মেধার ক্রমবিকাশকে। প্রবল ইচ্ছাশক্তি দিয়ে নিজের প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে সাফল্যের পথে এগিয়ে যাওয়া কষ্টকর কিন্তু অসম্ভব নয়। তেমনি এক অদম্য কিশোরী মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার ধুলন্ডী গ্রামের মিতু রায়। স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সে হাতে তুলে নিয়েছে সুঁই-সুতা। পড়াশোনার পাশাপাশি হস্তশিল্পেও তার সুনিপুণ মেধা ও সুপ্ত প্রতিভার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। মিতু সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। বাড়ি থেকে স্কুল প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে। তার শারীরিক দিক বিবেচনা করে শিক্ষকরা তাকে সপ্তাহে দুই দিন স্কুলে যেতে বলেছেন।

কিছু একটা করার মানসিকতা থেকেই সে হাতে তুলে নেয় সুঁই- সুতা। তৈরি করে ম্যাট, নকশীকাঁথা, শপিংব্যাগ, মেয়েদের সাইড ব্যাগ, পাপস ইত্যাদি। কম্পিউটার শেখার প্রতি অনেক আগ্রহ তার। মিতু রায় জানায়, তার ইচ্ছে ছিল জীবনে এমন কিছু একটা করবে, যেখানে কারো কাছে কাজের জন্য যাওয়া লাগবে না বরং নিজেই এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবে যেখানে প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান হবে। তার ভাষায়, ‘আমি কখনো নিজেকে দুর্বল ভাবি না, অন্য মানুষের মতোই নিজেকে মনে করি। আর কাজ করে যাই নিজের স্বপ্নপূরণে। সরকারি কোনো সহযোগিতা পেলে হস্তশিল্পের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে পারতাম।’

মিতুর মা জানান, জন্মগতভাবেই মিতুর দুই হাত-পা অস্বাভাবিক। ডাক্তারি পরিভাষায় বলে, মুগুর হাত-পা। দুই হাঁটুতে কোনো প্লেট নেই। হামাগুঁড়ি দিয়ে চলাচল, অথচ মুখে অনাবিল হাসিতে মায়া জড়ানো। হুইলচেয়ারেই তার বেড়ে ওঠা। তবে এই হুইলচেয়ার আর বিছানায় বসেই প্রতিবন্ধিতা জয় করে ইতিমধ্যেই নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলেছে মিতু। হস্তশিল্পের সুনিপুণ কারুকাজে এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে আলোড়ন। অর্থের যোগান পেলে হস্তশিল্পে তার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

মিতুর বাবা বলেন, ‘আমার দুই মেয়ের মধ্যে এই ছোট মেয়েকে নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু এখন এই প্রতিবন্ধী মেয়ের জন্য গর্ব করি। মিতু কুটির শিল্পের কাজ শেখার পর নিজেই ঘরে বসে তৈরি করে নানা পণ্য। তা বিক্রি করে সংসারের সচ্ছলতা ফিরেছে।’ এ ব্যাপারে বালিয়াখোড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আওয়াল খান বলেন, ‘সমাজে প্রতিবন্ধীরা যে বোঝা নয়, মিতু রায় তার জ্বলন্ত উদাহরণ। মিতু রায় পরিশ্রম করে সংসারের দুঃখ-কষ্ট দূর করতে চেষ্টা করছে। পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। আমরা তাকে প্রতিবন্ধী ভাতা দিয়ে আসছি। তবে তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় আরো সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করব।’

ইত্তেফাক/এসএ