শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সাতক্ষীরায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আতঙ্কে লক্ষাধিক মানুষ

আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০১৯, ১৬:৩৮

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আতঙ্কে সাতক্ষীরার লক্ষাধিক মানুষ। উপকূলের প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় তাদের মধ্যে এ আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। সিডর ও আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত এসব বেড়িবাঁধে ব্যাপক ভাঙ্গন ও ফাটল থাকার পরও গত কয়েক বছরে তা সংস্কার না হওয়ায় চরম আতঙ্কে আছে এই এলাকার মানুষ। 

এদিকে বর্তমানে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বুলবুল সংবাদে আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে উপকূলীয় জনপদের মানুষ। এছাড়া নদী ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করায় সিডর ও আইলা বিধ্বস্ত সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি, কালীগঞ্জ ও দেবহাটা উপজেলার ভাঙ্গন কবলিত এলাকার লক্ষাধিক মানুষ চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। এসব এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কার না হওয়ায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে যেকোনো সময় আশাশুনি, শ্যামনগর, কালীগঞ্জ ও দেবহাটা উপজেলার কপোতাক্ষ নদ, খোলপেটুয়া, ইছামতি ও বেতনা নদীর বেড়ি বাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশংকা করছে এলাকাবাসী। 

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-১ ও ২ এর অধীনে ১১ টি পোল্ডারে ৮০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে প্রায় ৭০ টি পয়েন্টে ২৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। বেড়িবাঁধে ভাঙ্গন শুরু হওয়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ।                                  

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ- ১ ও ২ এর আওতাধীন আশাশুনি উপজেলার জেলেখালী, দয়ারঘাট, কেয়ারগাতি, চাকলা, বিছট, কাকবসিয়া, কোলা, হাজারাখালী, ঘোলা ত্রিমোহনী, হিজলিয়া, চন্ডিতলা ও বুধহাটার তেতুলতলা, দেবহাটা উপজেলার সুশীলগাতী, চরকোমরপুর, খারাট, টাউনশ্রীপুর ও ভাতশালা এবং শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর, গাবুরা, কাশিমাড়ি, বুড়িগোয়ালিনী, মুন্সিগঞ্জ ও রমজাননগর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে পাউবোর বেড়িবাঁধে মারাত্মক ভাঙন আছে। ঘুর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানলে যে কোন মুহূর্তে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে এই তিন উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়বে। পানিতে তলিয়ে যাবে হাজার হাজার বিঘা চিংড়ি ঘের ও ফসলের ক্ষেত।  উৎপাদন ব্যাহত হবে দেশের সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি। 

একই ভাবে মারাত্মক আতঙ্কে আছে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার সীমান্ত নদী ইছামতি। সম্প্রতি উপজেলার সুশীলগাতী, চরকোমরপুর, টাউনশ্রীপুর ও ভাতশালা এলাকায় ইছামতি নদীর বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ফলে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল এর আগমনে ওই এলাকায় বসবাসরত মানুষজন চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে বলে জানা গেছে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল নিয়ে বেশ আতঙ্কিত। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ  বিভাগের অধীনে ৩৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে কমপক্ষে ১০টি পয়েন্টে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের পরিমাণ প্রায় ৮ কিলোমিটার এবং ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ৩০ কিলোমিটারের মত। 

সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২ এর নির্বাহী  প্রকৌশলী আরিফ উজ্জামান খান জানান, বুলবুল মোকাবেলায়  তার বিভাগে সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ বিভাগের আওতাধীন ৪২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৬০টি পয়েন্টে ১২কিলোমিটার বাঁধ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এবং প্রায় ২০০ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। 

ইত্তেফাক/এএএম