শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে কথা হবে: সেনাপ্রধান

আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০১৯, ১৮:০১

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, দুদেশের সেনাবাহিনীর সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে তিনি আগামী মাসে মিয়ানমার সফরে যাবেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে কথা বলবেন।

তিনি বলেন, সেনাবাহিনী সবসময় দেশ ও জাতির স্বার্থে কাজ করে। কাজ করে সরকারের সহায়ক হিসেবেও। সরকারের যে পলিসি থাকে তা এগিয়ে নিয়ে যাওয়াও আমাদের কাজ। তাই দুদেশের সামরিক বাহিনীর স্বার্থ সংশ্লিষ্ঠ বিষয় নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়েও কথা হবে।

তিনি যশোরের ৫৫ পদাতিক ডিভিশনে বুধবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৫টি ইউনিটকে রেজিমেন্টাল কালার প্রদান অনুষ্ঠান এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে একথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, ৩১ বছর ধরে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের সেনাসদস্যরা দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছে। আগামীতেও আন্তর্জাতিক চাহিদার আলোকে সেনাসদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। ব্লু  হেলমেটের আওতায় মাইন ক্লিয়ারিয়ের জন্য সৌদী আরব যাবেন সেনাসদস্যরা। আর সাংবিধানিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে সরকারকে যেকোনো প্রয়োজনে সবরকম দায়িত্ব প্রদানে আমরা সচেষ্ট রয়েছি।

যশোর সেনানিবাসের সিগন্যাল ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড স্কুল প্রাইভেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেন, একটি আধুনিক, যুগোপযোগী ও শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক বিন্যাস ও পরিবর্তনের পাশাপাশি আধুনিকায়নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

তিনি বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে অত্যাধুনিক ও বাস্তবসম্মত প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। আর কোনো প্রশিক্ষণই ফলপ্রসূ হবে না যদি আমাদের মৌলিক প্রশিক্ষণের ঘাটতি থাকে। প্রশিক্ষণ ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে ‘বেসিক সোলডারিং’-এর উপরও গুরুত্ব দিতে হবে। মনে রাখবেন প্রশিক্ষণই সর্বোচ্চ কল্যাণ। তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতেও মাতৃভূমির অখণ্ডতা রক্ষা তথা জাতীয় যেকোনো প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে সদা প্রস্তুত থাকতে হবে।

সেনাপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে আজ প্রথমবারের মতো কোনো সিগন্যাল ইউনিট রেজিমেন্টাল কালার অর্জন করল- যা এক সিগন্যাল ব্যাটালিয়ন তথা কোর অব সিগন্যালস-এর ইতিহাসে একটি গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা করল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে প্রতিষ্ঠিত প্রথম সিগন্যাল ইউনিট সিগন্যাল ব্যাটালিয়ন। ১৯৭১ সালে যাত্রা শুরুর পর হতে ‘অপারেশন আলোর সন্ধানে’ এবং ‘অপারেশন নবযাত্রাসহ অর্পিত সকল দায়িত্ব অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে পালন করেছে। এই ইউনিট বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে ভোট গ্রহণে সকলপ্রকার কারিগরি সহায়তা সফলতার সঙ্গে প্রদান করে- যা সকল মহলে প্রশংসিত হয়েছে। এছাড়াও এক সিগন্যাল ব্যাটালিয়ন ফরমেশন পর্যায়ে প্রশিক্ষণ প্রতিযোগিতা ও খেলাধুলায় ৪৬টি ট্রফি অর্জনে সক্ষম হয়।

তিনি বলেন, রেজিমেন্টাল কালার প্রাপ্তি যেকোনো ইউনিটের জন্য একটি বিরল সম্মান ও পবিত্র আমানত। আজ সেই রেজিমেন্টাল কালার এই ৫টি ইউনিটের হাতে তুলে দেয়া হলো। এই বিরল সম্মান ও গৌরব অর্জন করায় ইউনটসমূহকে তিনি আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আমি আশা করি তার মর্যাদা রক্ষার জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে আপনারা সবসময় সচেষ্ট থাকবেন।

সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, বাংলাদেশ ও সৌদী আরবের মধ্যে আন্তঃরাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে মাইন অপসারণে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ হতে সেনাসদস্য মোতায়নের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বাংলাদেশ হতে এক হাজার ৭শ’ জনবলের দুটি ডি মাইনিং ব্যাটালিয়ন এবং বিএমসি সদর দপ্তরের সঙ্গে ১৮ জন জনবল সৌদী আরবের জাযান এবং নাজরান এলাকায় নিয়োজিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ হতে এমওইউ সৌদী কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে- যা অনুমোদন হওয়ার পর চূড়ান্তভাবে কার্যক্রম শুরু হবে।

অনুষ্ঠানে গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক ইউনিটসমূহ কর্তৃক সেনাবাহিনী তথা দেশমাতৃকার সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য রেজমেন্টাল কালার প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৮ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি, ১২ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি, ৩৬ এডি রেজিমেন্ট আর্টিলারি, ৩ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন এবং ১ সিগন্যাল ব্যাটালিয়ন কালার প্যারেডে অংশগ্রহণ করে এবং প্রধান অতিথির কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রেজিমেন্টাল পতাকা গ্রহণ করে।

উল্লেখ্য, সেনাবাহিনীর সামরিক ঐতিহ্য অনুযায়ী যেকোনো ইউনিটের জন্য রেজিমেন্টাল কালার প্রাপ্তি অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর প্রাক্তন প্রধান ছাড়াও কোর অব আর্টিলারি, ইঞ্জিনিয়ার্স ও সিগন্যালসে কর্মরত এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাগণ, সেনাসদর ও বিভিন্ন ফরমেশনের উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাগণ এবং অসমারিক প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

ইত্তেফাক/আরকেজি