শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

চিকিৎসকের অবহেলায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ, গ্রেফতার ২

আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০১৯, ২০:১৬

যশোর শহরের বেসরকারি ক্লিনিক বন্ধন হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসকের অবহেলায় এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এক চিকিৎসকসহ দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই প্রসূতির নাম  ময়না খাতুন (২৬)। সে শহরের পালবাড়ির গাজিরঘাট এলাকার ইসমাইল হোসেন হিরুর স্ত্রী ।

নিহতের ভাই শিমুল পারভেজ জানান, তার বোনের প্রসব বেদনা উঠলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শহরের বেসরকারি কুইন্স হাসপাতালে নিয়ে যান। যাওয়ার পর সুরাইয়া নামে একজন নার্স বোনকে পাশের বন্ধন হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যেতে বলেন। সেখানে ঢাকা থেকে একজন গাইনি বিশেষজ্ঞ এসেছেন বলেও তিনি জানান। এরপর বোনকে বন্ধনে নিয়ে গেলে ডা. পরিতোষ কুমার কুণ্ডু বলেন ‘রোগীর অবস্থা ভালো না, এই মুহূর্তে সিজার করা দরকার।’ বোনের ডেলিভারি ডেট আরও তিনদিন বাকি ছিল। কিন্তু ডাক্তার নতুন করে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই রাত সাড়ে ৯টার দিকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। এমনকি তিনি বন্ড সইও করাননি। সিজার করেই ডাক্তার বেরিয়ে চলে যান। এরপর ২০-২৫ মিনিট পরেই বোনের খিঁচুনি ওঠে এবং মারা যান।

আরও পড়ুন: বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রির দায়ে ২ ব্যবসায়ীকে জরিমানা

শিমুল পারভেজ অভিযোগ করে বলেন, সিজার শেষে বোনের অবস্থা খুব খারাপ হলে নার্সরা রক্ত সংগ্রহ করতে বলেন। এক ব্যাগ রক্ত আনা হয়। পরে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে নার্সরা আরও কয়েকটি ইনজেকশন এবং রক্ত আনার কথা বলেন। কিন্তু সেই সময় আমার দুলাভাই বোনের হাত-বুক পরীক্ষা করে দেখেন, তিনি আর বেঁচে নেই। হাসপাতালের নার্স ও কর্মীরা মৃত অবস্থায় বোনের শরীরে ইনজেকশন এমনকি তাকে খুলনায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তারা ৩-৪ মিনিটের মধ্যে একটি অ্যাম্বুলেন্সও ম্যানেজ করে ফেলেন। এ নিয়ে ঝামেলা হওয়ায় রাত ১১টার দিকে আমরা কোতোয়ালি পুলিশকে বিষয়টি জানাই। পুলিশ এসে ডা. পরিতোষ কুমার কুণ্ডু ও হাসপাতালের ম্যানেজার আক্তারুজ্জামানকে থানায় নিয়ে যায়।

এদিকে ডা. পরিতোষ কুমার কুণ্ডুর দাবি, রাত ১০টার দিকে সিজার করা হয়। তখন কোনো সমস্যা হয়নি। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণও হয়নি। অপারেশনের পর সেলাই করে দিয়ে আমি চলে যাই। এরপর তাকে পরিষ্কার করে বেডে দেওয়া হয়। ঘণ্টাখানেক পর আমাকে ফোনে জানানো হয়, রোগীর অবস্থা খারাপ। আমি ইমার্জেন্সি কিছু ঔষধ ব্যবহারের কথা বলে দিই। ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার ওখানেই থাকেন। পরে আমাদের যা করণীয় তা করেছি। তারপরও আমরা তাকে বাঁচাতে পারিনি। আট বছর আগে উনি একটা বাচ্চা প্রসব করেন। মাঝে একটা বিরাট গ্যাপ। আর রোগী মারা গেছেন শ্বাসকষ্টের কারণে। তার যে শ্বাস কষ্ট ছিল, সে কথা স্বজনরা আগে জানাননি।

যশোর কোতোয়ালি থানার অফিসার্স ইনচার্জ মনিরুজ্জামান বলেন, রোগীর মৃত্যু নিয়ে উত্তেজনার খবর পেয়ে পুলিশ ওই হাসপাতালে যায়। এরপর সেখানকার ডাক্তার ও ব্যবস্থাপককে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। শুক্রবার দুপুরে এ ঘটনায় মামলা করা হয়। আটক দুজনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

ইত্তেফাক/এএএম