শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পেঁয়াজের ঝাঁজে ম্লান কৃষকদের নবান্ন উৎসব

আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০১৯, ১৩:০২

পহেলা অগ্রহায়ণ মানে নবান্ন উৎসব। বাঙ্গালী সাংস্কৃতিক অন্যতম একটি অংশ নবান্ন। শত বছর আগে থেকে চলে আসছে এই উৎসবটি। আমন মৌসুমের নতুন ধানের আগমনের সঙ্গে বাঙ্গালি সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এই উৎসবটি। বিশেষ করে কৃষক ও ক্ষেত মজুরদের আনন্দের উৎসব এই নবান্ন। নবান্নকে ঘিরে উপজেলার প্রতিটি ঘরেই নানা আয়োজন চললেও পেঁয়াজের ঝাঁজের কারণে অনেকটাই তা ম্লান। 

নবান্ন উৎসবে গ্রাম বাংলার ঘরে-ঘরে নতুন ধানের বিভিন্ন পিঠা, পায়েসসহ বাহারি খাবারের আয়োজন করা হয়। মেয়ে-জামাইসহ অন্যান্য আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে নিয়ে এসে বাহারি পিঠা, পায়েসসহ নানা সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করা হয়। গ্রামের কোথাও কোথাও এ উপলক্ষে আয়োজন করা হয় গ্রামীণ মেলার। 

তারই ধারাবাহিকতায় রাণীনগর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের কয়েকশত গ্রামে নবান্নের আমেজ বিরাজ করছে। মাঠে মাঠে চলছে আমন ধান কাটার ধুম। কোথাও ধান কেটে ঘরে নিয়ে আসছে কৃষক। কোথাও গ্রামের মেঠোপথে ধান পরিষ্কার করার কাজে ব্যস্ত কৃষাণীরা।

উপজেলার কাটরাশইন গ্রামের কৃষকরা রনজিত সাহা বলেন, নবান্ন আমাদের বাঙ্গালীর প্রাণের একটি উৎসব। এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু পেঁয়াজের কারণে আমরা আর কি উৎসব করবো। বর্তমান বাজারে ধানের যে দাম রয়েছে সেই দাম অব্যাহত থাকলে কৃষকরা অনেকটাই লাভবান হবে। আর এবার কৃষকদের নবান্ন উৎসবও ভালো হবে বলে আশা করছি। ধানের দাম ভালো থাকায় এবার নবান্ন উৎসবটি একটু ভিন্নভাবেই করার চিন্তা রয়েছে।

মিরাট গ্রামের কৃষক কলিম উদ্দিন বলেন কৃষকদের শক্তিই হচ্ছে ধানের দাম। কয়েক বছর যাবত ধানে লোকসান দেওয়ায় আমার পরিবার থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে নবান্নের আনন্দ। কিন্তু বর্তমানে পেঁয়াজের দাম আমাদের নবান্ন উৎসবকে অনেকটাই ম্লান করে দিয়েছে। বাড়িতে মেয়ে-জামাই ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন আসবে। কিন্তু পেঁয়াজ কিনতে গেলে ফকির হতে হচ্ছে। 

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে বিভিন্ন জাতের আমান ধানের চাষ হয়েছে। মোট ১৮ হাজার ১ শত ২৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আমন ধান চাষ করা হয়েছিলো। এরমধ্য কাটারী ভোগ ৪ শত ২ হেক্টর, পায়জাম ১ হাজার ২ শত হেক্টর, স্বর্ণা ২ হাজার ৯ শত হেক্টর, বিনা-৭ ৯ শত ১৫ হেক্টর ও রেকর্ড পরিমাণ চিনিআতপ ১১ হাজার ৩ শত হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। তবে বিগত সময়ের চেয়ে চলতি মৌসুমে চিনিআতপ ধানের রেকর্ড পরিমাণ বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে বলে কৃষি অফিস জানায়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। চলছে আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ। বিঘা প্রতি ২০-২২ মণ হারে ফলন পাচ্ছে কৃষকরা। বর্তমানে কৃষকদের দম ফেলার ফুরসত নেই। তেমন কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায়, পোকা-মাকড়ের তেমন কোন বড় ধরনের আক্রমণ না হওয়ায়, কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে ও কৃষি অফিসের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এই বাম্পার ফলন সম্ভব হয়েছে। তবে কোন সমস্যা না হলে আর অল্পকিছু দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ। 

ইত্তেফাক/জেডএইচ