শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কুমিল্লা অঞ্চলের রেলপথ

১৩৭ লেভেল ক্রসিং যেন মরণফাঁদ!

আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০১৯, ০৩:০০

ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের কুমিল্লা অঞ্চলের অন্তত ১৩৭টি অবৈধ লেভেলক্রসিং যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এসব লেভেলক্রসিংয়ে নেই কোনো গেটম্যান, এমনকি যানবাহন ও পথচারী থামানোর ব্যারিয়ারও নেই। এছাড়া রেলওয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগসাজশে অবৈধ দখলদাররা মূল্যবান সম্পত্তি দখল করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলার কারণে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে লেভেলক্রসিং এবং এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

এদিকে রেলওয়ের স্থানীয় একাধিক কর্মকর্তার দাবি- বিভিন্ন সময়ে কিছু কিছু স্থানে অভিযান চালিয়ে রেলের ভূমি দখলমুক্ত করা হলেও কিছু দিন না যেতেই অবৈধ প্রভাবশালী ভূমিখেকোদের দাপটে সে ভূমি আবারো বেদখল হয়ে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম এবং লাকসাম-নোয়াখালী-চাঁদপুর রেলপথের বেশিরভাগ স্থানে গেটম্যান ও ব্যারিয়ার না থাকায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। রেলপথের কুমিল্লার লাকসাম-নোয়াখালী রুটে ৩৮টি, লাকসাম-চাঁদপুর রুটে ৩৭টি ও লাকসাম-আখাউড়া রুটে ৪৭টি এবং লাকসাম থেকে চৌদ্দগ্রামের গুণবতী রুটে ১৫টি অবৈধ লেভেলক্রসিং রয়েছে। এসব রুটে বৈধ লেভেলক্রসিং রয়েছে মাত্র ৩২টি।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের মতে, অরক্ষিত লেভেলক্রসিংগুলো অবৈধ বা অস্বীকৃত। এগুলো রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ ও অনুমতি ছাড়াই যথাযথ নিয়ম অনুসরণ না করে বিভিন্ন সংস্থা তৈরি করেছে। আর তাই এসব লেভেলক্রসিংয়ে লোকবল নিয়োগ এবং ব্যারিয়ার নির্মাণের কোনো এখতিয়ার রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নেই। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ঐসব লেভেলক্রসিংয়ের সামনে নিজ দায়িত্বে সাবধানে পারাপার হওয়ার সতর্কবাণীর সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রেখেছেন।

রেলওয়ের সূত্র জানায়, কুমিল্লা অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি অবৈধ লেভেলক্রসিং রয়েছে লাকসাম-আখাউড়া এবং লাকসাম-নোয়াখালী রুটে। ব্যারিয়ার ও গেটম্যানবিহীন অবৈধ এসব লেভেলক্রসিং পারাপার হতে গিয়ে বিগত সময়ে ট্রেন ও যানবাহন সংঘর্ষে অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে এবং পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে বহু মানুষকে। গত বছরের জানুয়ারি মাসে লাকসাম-আখাউড়া রুটের কুমিল্লার সদর দক্ষিণের বিজয়পুর জেলখানা বাড়ি লেভেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় এক্সিম ব্যাংকের গাড়ি দুর্ঘটনায় ৭ জন মারা যায়। ২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর একই লেভেলক্রসিং পার হতে গিয়ে সিলেটগামী পাহাড়িকা ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ৩ যাত্রী প্রাণ হারায়। এছাড়া একই সালে লালমাই উপজেলার বাগমারা রেলক্রসিংয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে গেট কিপার আবদুল হান্নানসহ বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ২০১১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদলে অবৈধ লেভেলক্রসিংয়ে ঢাকা অভিমুখী সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় একটি বাসের ১৮ জন যাত্রী প্রাণ হারায় ও ২৫ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এমনিভাবে প্রতিবছরই এসব অবৈধ লেভেলক্রসিং কেড়ে নিচ্ছে বহু মানুষের প্রাণ।

আরো পড়ুন: ছোটো ভাই প্রেসিডেন্ট বড়ো ভাই প্রধানমন্ত্রী

এদিকে জেলার লালমাই উপজেলার বাগমারা লেভেলক্রসিং এলাকার আবদুল কাদের, জয়নাল আবেদীনসহ অন্তত ১৪ জন বাসিন্দা জানান, এ রেলক্রসিংটি অবৈধ দখলদারের কারণে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে।

প্রতিদিন অসংখ্য যানবাহন পারাপার হয়। কিন্তু এখানকার এক দখলদারকে দুই বছর আগে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য নোটিশ দিলেও তা কার্যকর হয়নি। সে যোগসাজশে রেলক্রসিং সংলগ্ন আরো সম্পত্তি দখল করে গুদাম ও দোকানপাট নির্মাণ করেছে। এসব অবৈধ স্থাপনার কারণে ব্যস্ততম ঐ রেলক্রসিং এলাকা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে এবং সেখানে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

কুমিল্লার লাকসাম রেলওয়ের ল্যান্ডস্ এন্ড বিল্ডিংস্ ভূ-সম্পত্তি বিভাগের কানুনগো কায়সার হামিদ জানান, কিছু কিছু স্থানে অভিযান চালিয়ে রেলের ভূমি দখলমুক্ত করা হয়েছে। লোকবল সংকটের কারণে নিয়মিত অভিযান করা যাচ্ছে না। তবে সহসাই ঝুঁকিপূর্ণ রেলক্রসিং এলাকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের অভিযান চালানো হবে।

লেভেলক্রসিংয়ের বিষয়ে রেলওয়ে কুমিল্লার ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী লিয়াকত আলী মজুমদার জানান, রেলপথে যেসব অবৈধ লেভেলক্রসিং রয়েছে সেগুলো বৈধ করার ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।

ইত্তেফাক/বিএএফ