শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বানারীপাড়ায় তিন খুন

পরকীয়া জেনে ফেলাতেই এই হত্যাকাণ্ড!

আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৭:০৩

বরিশালের বানারীপাড়ার সলিয়াবাকপুর গ্রামে কুয়েত প্রবাসীর বাড়িতে তিন খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে প্রবাসী হাফেজ আব্দুর রবের স্ত্রী মিশরাত জাহান মিশুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রবিবার গভীর রাতে তাকে গ্রেফতার করে গতকাল সোমবার আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালত তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বানারীপাড়া থানার ওসি শিশির কুমার পাল জানান, শুক্রবার রাতে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ১৪ ঘণ্টার মধ্যে আটক জাকির হোসেন ও তার সহযোগী জুয়েল হাওলাদার রবিবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যার দায় স্বীকার করে। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বাড়ির মালিক প্রবাসী আব্দুর রবের স্ত্রী মিশরাত জাহান মিশুকে রবিবার রাতে গ্রেফতার করে সোমবার জুডিশিয়াল আদালতের বিচারক মো. মনিরুজ্জামানের আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন জানালে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় তিন বছর আগে জাকির ঐ বাড়ির নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করার সময় কুয়েত প্রবাসী হাফেজ আব্দুর রবের স্ত্রী মিশরাত জাহান মিশুর সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে তোলে। তাদের অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি জেনে যান প্রবাসী আব্দুর রবের মা মরিয়ম বেগম এবং খালাত ভাই মো. ইউসুফ। এ কারণে তাদের হত্যার পরিকল্পনা করে জাকির ও মিশু।

সে অনুযায়ী গত শুক্রবার রাতে বাসার অন্যরা ঘুমিয়ে পড়লে ঘরের প্রধান দরজা খুলে রাখে মিশু। রাত ১১টার পর জাকির ও তার সহযোগী জুয়েল ঐ বাসায় ঢুকে প্রথমে ইউসুফের পা বেঁধে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে তারা পাশের কক্ষে ঘুমিয়ে থাকা মরিয়ম বেগমকেও একইভাবে শ্বাসরোধে হত্যা করে। এরপর তারা ইউসুফের লাশ বাড়ির সামনে পুকুরের পানিতে ভাসিয়ে দেয় এবং মরিয়মের লাশ কক্ষ থেকে বারান্দায় নিয়ে রাখে।

মিশন শেষ করে তারা মিশুর কক্ষে গিয়ে তার বিবস্ত্র ছবি তোলে। হত্যার ঘটনা ফাঁস করলে ঐ ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হয় মিশুকে। এ সময় পাশের ঘরে ঘুমিয়ে থাকা প্রবাসীর ভগ্নিপতি শফিকুল আলম ঘুমের মধ্যে কাঁশি দেন। শফিকুল দুই খুনের বিষয়টি টের পেতে পারেন সন্দেহে তাকেও শ্বাসরোধে হত্যা করে তারা।

আরো পড়ুন: প্রবাসীর বাড়িতে মা-ভগ্নীপতি, পুকুরে হাত-পা বাঁধা ভাইয়ের লাশ

অপরদিকে নিহত তিন জনের ময়নাতদন্ত শেষে রবিবার বিকালে প্রথমে সলিয়াবাকপুর এ রব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে তাদের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে নিহত মরিয়ম বেগমকে বানারীপাড়ার সলিয়াবাকপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। স্বরূপকাঠির ছারছীনা দরবার শরীফে শফিকুল আলমের দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে তাকে আকলম গ্রামে ও বানারীপাড়ার ধারালিয়া গ্রামে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে ইউসুফ হোসেনের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

আলোচিত তিন খুনের ঘটনার পর প্রবাসী হাফেজ আব্দুর রবের ছোটো ভাই ঢাকায় এনআরবি ব্যাংকে কর্মরত সুলতান মাহামুদ বাদী হয়ে বানারীপাড়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ইত্তেফাক/এমআর