মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সরিষা চাষে তেল ও মধু মিলছে একই ক্ষেতে

আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৯:৫৮

মানিকগঞ্জের সরিষাচাষীদের মুখে এ বছর হাসি ফুটেছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় সরিষা আবাদ বৃদ্ধির সঙ্গে বেড়েছে মৌসুমী মৌচাষীদের তৎপরতা। সরিষা যেমন দিচ্ছে তেল, সঙ্গে দিচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এছাড়া সরিষা চাষে রয়েছে দিগুন লাভ। জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধির জন্য এর ফুল ও পাতা ঝরে তৈরি হয় জৈব সার। অপরদিকে সরিষাক্ষেতে তেল প্রাপ্তির পাশাপাশি মধু চাষ করে মধু বিক্রিতে মিলছে প্রচুর অর্থ।

যে কারণে মানিকগঞ্জ জেলার অনেক কৃষক এখন ধান ও অন্য ফসলের পাশাপাশি সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকছে। জেলায়  চলতি বছর অর্ধ কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ৩৫ টন মধু সংগ্রহ হবে, এমন আশাবাদ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের।

মানিকগঞ্জের কৃষকেরা বুঝে গেছেন মৌমাছি মধু সংগ্রহ করলে পরাগায়নের মাধ্যমে ফসল ভালো হয়। তাই মৌসুমী মৌচাষীরা আসায় জেলায় সরিষার ফলন বৃদ্ধি পাবে প্রায় ১৫ শতাংশ।

জেলার ঘিওরের কৃষক মিয়া জানান, তার আবাদী ৩ একর জমিতে সরিষা আবাদ করে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন। গত ১০ বৎসর আবাদযোগ্য জমিতে সরিষা চাষ করে প্রতি মৌসুমে ২০/৩০ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত লাভ করে আসছেন। চলতি মৌসুমে সরিষার ফলন ভালো হলে আরও বেশি লাভের আশা করছেন।

বানিয়াজুরী  ইউনিয়নের রাথুরা গ্রামের কৃষক মো. কবির জানান, ভালো বীজ শনাক্ত করে সঠিক সময়ে বীজ রোপণ করে সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করে রোগ নিরাময়ের জন্য বিভিন্ন প্রকার সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করে আগাম ফলন ফলিয়ে তা বাজার জাত করতে পারলে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে অধিক লাভ করা সম্ভব হবে। এক বিঘা সরিষা চাষ করতে খরচ হয় এক থেকে দেড় হাজার টাকা। ভালো ফলন হলে বিঘায় ৪-৫ মণ সরিষা উৎপাদন হয়। প্রতিমণ সরিষার বাজার মূল্য ১৫-১৮ শত টাকা। অন্য ফসল চাষ করে প্রতি বিঘায় যে পরিমাণ লাভ হয় তার চেয়ে ঐ পরিমাণ জমিতে সরিষা চাষ করে দিগুন লাভ করা যায়।

হলুদ ফুলে ভরা এ সরিষা মাঠে বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে মধু সংগ্রহে ব্যাস্ত সময় কাটাচ্ছে মৌ চাষীরা। জেলার বিভিন্ন এলাকা সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সাতক্ষিরা, জামালপুর, গাজীপুর, পাবনা, নারায়নগঞ্জ, কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় শতাধিক মৌ চাষীর দল মানিকগঞ্জের ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় সরষে ফুল থেকে বিশেষ কায়দায় মধু সংগ্রহ করছে। তাদের সংগৃহীত এই মধূ পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

ঢাকা আরিচা মহাসড়কের পাশেই সরিষা ক্ষেতে মধু সংগ্রহের সরঞ্জাম নিয়ে বসেছে নারায়ণগঞ্জের কুমুলী ইউনিয়নের মৌচাষী দলের প্রধান মোঃ সেলিম জানান, প্রতি মণ মধু ৮-১০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন ঢাকার যাত্রাবাড়ি ও আশুলিয়ার এক পাইকারের কাছে। উন্নত প্রশিক্ষণ আর সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে মধু সংগ্রহের কাজে ব্যাপক উন্নয়ন করা সম্ভব। তিনি আরও জানান, দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি  রফতানী করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সহকারী পরিচালক মো. আশরাফ উজ্জামান বলেন, ‘মানিকগঞ্জে এবার ৪৪ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৮৮ হাজার মেট্রিক টন। সরকার বারি ১৪ জাতের বীজ সরবরাহ করায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। জেলায় ৩৫ টন মধু সংগ্রহ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।'

আরও পড়ুন: সাঁথিয়ায় পুলিশের চাঁদাবাজির প্রতিবাদে অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল

তিনি আরও বলেন, ‘মৌচাষীরা আসায় ফলন  প্রায় ১৫শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। মৌমাছি শুধু মধুই সংগ্রহ করে না, ফসলের জন্য  ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ মেরে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষকদের সহয়তা করে থাকে।

ইত্তেফাক/নূহু