শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনায় রাশিয়ায় প্রশিক্ষণে দেশি তরুণরা

আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০২০, ১৯:৫৯

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার জন্য দেশীয় এক ঝাঁক তরুণ রাশিয়ার নভোভরনেঝেতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন। রাশিয়ার নভোভরনেঝ শহরে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ভিভিআর ১২০০ এর দুটি চলমান পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ২৮০ জন তরুণ নয় মাস থেকে দেড় বছর মেয়াদী বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন। ২০২৫ সালের মধ্যে এই প্রকল্পে দক্ষ ৩ হাজার জনবল প্রয়োজন হলেও এরই মাঝে বেশ কিছু তরুণ প্রশিক্ষণ শেষে রূপপুরে যোগদান করেছেন বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। 

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, একই সঙ্গে চলছে প্রকল্প বাস্তবায়ন ও জনবল প্রশিক্ষণের কাজ।

ট্রেনিং সেন্টারে কথা হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের ছাত্র এমডি হালিম সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ফুকুসিমা- চেরেনেনবিলের দুর্ঘটনার বিষয়টি মাথায় রেখেই ভিভিআর-১২০০ প্রযুক্তির উদ্ভাবন করা হয়েছে। এখানে ৪টি ধাপে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রথমে থিয়োরি। থিয়োরি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করলে প্র্যাকটিকাল। এরপর সিম্যলেটর এবং পরে সরাসরি হ্যান্ডেলিং।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে আসাদুল্লাহ যোগ দিয়েছেন রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার গ্রিড কোম্পানিতে। তিনি বলেন, সেফটির ওপর গুরুত্ব দিয়ে রূপপুরের ডিজাইন করা হয়েছে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার ছাত্রী কোহিনুর আক্তার বলেন, আমি খুশি যে আমাদের দেশে এধরণের প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিজ্ঞানের ছাত্র সাখাওয়াত হোসেন জানান, সর্বাধুনিক এই প্রকল্প গ্রহণ করে বাংলাদেশ সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

কথা হয় মেইন কন্ট্রোল রুমে প্রশিক্ষণ নেওয়া বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র আসাদুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি জানান, ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য এখানে আসেন। কাজে যোগ দেওয়ার সময় পরিবারের অনেকেই রেডিয়েশন নিয়ে ভয়ভীতির কথা বলেছিল। এখন তো হাত দিয়ে দেখছি, ভয়ানক কিছু নয়।

আরও পড়ুন: অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা, স্বামী পলাতক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার ছাত্রী নাফিসা আলম বলেন, কোর ক্যাচারের জন্য তেজস্ক্রিয়তা বাইরে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। 

জানা যায়, আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়নে ৩ ধাপে জনবল প্রয়োজন। প্রথমত নীতি নির্ধারক,  দ্বিতীয়ত প্রকল্পের নির্মাণ কাজ তদারকির জন্য পরমাণু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞ এবং তৃতীয়ত প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পরিচালনায় পরমাণু প্রকৌশলী ও অপারেটর।

এই মুহূর্তে বিশেষজ্ঞের ঘাটতি প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের সচিব আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রকল্পের কাজ তদারকি করতে বিদেশীদের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বায়রা) নিজের সক্ষমতায় ঘাটতি থাকলেও বায়রা ইতিমধ্যেই রাশান রেগুলেটরের সাহায্য নিয়েছে। এই চুক্তি আমরা অনেক আগেই করে দিয়েছি। তারা সার্বিক সাহায্য করেছে। এছাড়া ভারতের রেগুলেটরের সঙ্গেও চুক্তি করা হয়েছে। বায়রা ভারতীয় রেগুলেটরেরও পরামর্শ গ্রহণ করেছে।

নিউক্লিয়ার পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক ড. সৌকত আকবর জানান, রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তির আওতায় প্রশিক্ষিত হচ্ছে ভবিষ্যতের পরমাণু প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদ। দক্ষ জনবল তৈরির জন্য সিডিউল মোতাবেক যে সময়ে রাশিয়াতে জনবল প্রেরণ করার কথা ছিল, আমরা তা প্রেরণ করেছি। ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রশিক্ষণ চলবে এবং এই সময়ের মধ্যেই এদের ইমপ্রেস করা হবে। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি কমিশনের পূর্ব শর্ত অনুযায়ী অপারেশনাল জনবল থাকা, লাইসেন্স পাওয়া কোনটাতেই আমরা পিছিয়ে নেই।

প্রসঙ্গত, রাশিয়ার নভোভরনেঝে চলমান ১২০০ ভিভিআর এর আদলে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা রসাটম ঈশ্বরদীর রূপপুরে বাস্তবায়ন করছে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প।

ইত্তেফাক/এসি