শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

চুরির অপবাদে কিশোরকে ঝাড়ু ও জুতার মালা পরিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ

আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২০, ২০:০৬

লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদ দিয়ে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নিরব হোসেন নামে (১৬) এক কিশোরকে মারধর করাসহ ঝাড়ু ও জুতার মালা গলায় পরিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার বিকালে লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের ২ নং ওয়ার্ডের জালালিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

বর্তমানে দোকান কর্মচারী ওই কিশোরকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ভুক্তভোগী ওই কিশোরের শ্রমের টাকা না দিয়ে তাকে নির্যাতন করে বলে অভিযোগ করেন তার পরিবার। এ ঘটনায় সোমবার ভুক্তভোগীর নানী বাদী হয়ে সদর থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশ এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। 

এদিকে ঝাড়ু ও জুতার মালা গলায় পরিয়ে কিশোরকে এলাকায় ঘুরানোর ছবি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্নসহ এ ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

শনিবার বিকালে নিজ কর্মরত দোকান থেকে টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে এভাবেই বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারধর করা হয় ওই কিশোরকে। এ সময় তার গলায় ঝাড়ু ও জুতার মালা পরিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়। সেই নির্যাতনের ছবি ও ভিডিও তুলে ছেড়ে দেওয়া হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। যা এখন ভাইরাল।নির্যাতনের পর তাকে থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয়। 

আরো পড়ুন: মুজিববর্ষ নিয়ে ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট, সাবেক পৌর মেয়র গ্রেফতা

পরে পুলিশের কাছ থেকে তাকে ছাড়িয়ে এনে দোকান (চামড়ার দোকান) মালিক সালিসি বৈঠকের আয়োজন করেন। এতে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ মাতব্বররা ওই কিশোরকে দোষী সাব্যস্ত করে তার (কিশোরের) জরিমানা করেন ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু এতিম ওই কিশোরের দায়িত্ব নিতে রাজি হননি নানা ও নানী। এতেই হট্টগোল শুরু হয়ে আবারো মারধর করা হয় তাকে। রবিবার রাত ৯ টায় স্থানীয়দের সহযোগিতায় লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় ভুক্তভোগী কিশোরকে। সোমবার সকালে ভুক্তভোগীর নানী আলেয়া বেগম এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করেন।

জানা যায়, ৬ মাস ধরে লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের ২ নং ওয়ার্ডের জালালিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন রাশেদের চামড়ার দোকানে কাজ করতেন একই ওয়ার্ডের বাঞ্ছা নগরের মৃত কিরন হোসেনের ছেলে নিরব হোসেন। এরই মধ্যে তার মাকেও হারায় সে। দোকানে মাসিক শ্রমের টাকা পাননা বলে অভিযোগ তার। খোঁজাখুঁজির পরও দোকান মালিক রাশেদের কাছ থেকে মিলে না পারিশ্রমিক। 

তবে দোকান মালিক জানান, চুরি করে তার মূলধন আত্মসাৎ করায় নিজেসহ এলাকাবাসী তাকে শাস্তি হিসেবে ঝাড়ু ও জুতার মালা পরিয়ে দেন। পরে সালিসি বৈঠকে স্থানীয় কাউন্সিলর ও মাতাব্বররা তার ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

তবে কাউন্সিলর শিপন ও সালিসদার ইসমাইল ঝাড়ু ও জুতার মালা পরিয়ে দেওয়ার ঘটনা সম্পর্কে অবহিত নন বলে দায় এড়াতে চান। এদিকে এ ঘটনার বিচার দাবি করেন সচেতন মহল।

এ ব্যাপারে সদর থানার ওসি (তদন্ত) মোছলেহ উদ্দিন জানান, নির্যাতনের অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার তদন্ত চলছে।


ইত্তেফাক/এএএম