শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

রোহিঙ্গাদের মালয়েশিয়া যাত্রা: সামনে এলো আরও ভয়ঙ্কর তথ্য

আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৮:৩২

মালয়েশিয়া যেতে ব্যাকুল হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গারা।  থামানো যাচ্ছে না অবৈধ পথে অনিরাপদ এ নৌ যাত্রা।  প্রশাসনের কড়া নজরদারির মধ্যেও কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সৈকতের বিভিন্ন উপকূল দিয়ে রোহিঙ্গারা দালালদের হাত ধরে নৌকায় উঠছেন।  আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে নিত্য নতুন পয়েন্ট আবিষ্কার করছেন দালাল ও রোহিঙ্গারা। 

গত বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে সাবরাং এলাকার নৌ-উপকূল থেকে মালয়েশিয়া যেতে নৌকার অপেক্ষায় থাকা ১২ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে টেকনাফ থানা পুলিশ।  এসময় দুইজন দালালকেও আটক করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।

জানা যায়, চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি টেকনাফের বাহারছরা সমুদ্র উপকূল থেকে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতিকালে ২২ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে উদ্ধার করা হয়।  গত বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মালয়েশিয়া পাচারের চেষ্টাকালে প্রায় তিন শতাধিক রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুকে উদ্ধার করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।  ৫ এপ্রিল এক দিনেই টেকনাফের বাহারছড়ার সমুদ্র তীরবর্তী শামলাপুর এলাকা থেকে ১১৫ জনকে উদ্ধার করেছিল পুলিশ।  তাদের মধ্যে ৫০ পুরুষ, ৩৯ নারী ও ২৬ জন শিশু ছিল। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, শীতের সময় সাগর কম উত্তাল থাকে।  ফলে এ সময়কে নৌ-পথে পাচারের জন্য নিরাপদ বলে ধরে নিয়ে কাজ করে পাচারকারীরা।  এছাড়া অভিযানে সহযোগীরা আটক হলেও পাচারকারী চক্রের মূলহোতারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকায় মানবপাচার চেষ্টা বন্ধ হচ্ছে না। ফলে সক্রিয় দালাল চক্র রোহিঙ্গাদের সবকটি ক্যাম্প ভিত্তিক অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।  এদিকে পুলিশ বলছে, সমুদ্র উপকূলে নজরদারি অব্যাহত আছে।  গত বছরের মার্চ থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত অবৈধভাবে মালয়েশিয়াগামী প্রায় সাড়ে তিনশ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়েছে। যাদের অধিকাংশ নারী ও শিশু।

একাধিক রোহিঙ্গা নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অবিবাহিত নারীদের বিয়ের প্রলোভনে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে ট্রলারে তোলা হয়।  আবার যেসব নারীর স্বামী মালয়েশিয়ায় তারাও যেকোনো ভাবে মালয়েশিয়া যেতে উন্মুখ।  আরাকানে (রাখাইনে) যাদের অবস্থা সচ্ছল ছিল সেসব পরিবার যেকোনো মূল্যে মধ্যপ্রাচ্য কিংবা মালয়েশিয়া যেতে তৎপর।  অনেক তরুণী ও কম বয়সে বিধবা নারীরাই মালয়েশিয়া যেতে প্রতিনিয়তই চেষ্টা অব্যাহত রাখছে। যেকোনো দিন সুযোগ কাজে লাগলেই তারা সফল হবেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মালয়েশিয়া যেতে রাজি ব্যক্তিদের কাছ থেকে বিশ থেকে ত্রিশ হাজার টাকা ‘টোকেন মানি’ আদায় করা হয়।  চুক্তি হয় মালয়েশিয়া পৌঁছে গেলে বাকি টাকা দেওয়ার।  ক্যাম্পের দালালদের সাথে সহযোগী হিসেবে রয়েছে সুযোগসন্ধানী বাংলাদেশি দালালও। রাজি হওয়া রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প হতে বের করে তাদের (বাংলাদেশী দালাল) হাতে তুলে দেওয়া হয়।  আর বাংলাদেশি দালালরা সুযোগ বুঝে ট্রলার বা নৌকায় সাগরে অবস্থান করা জাহাজে তুলে দেওয়ার চেষ্টা চালায়।  ক্ষেত্র বিশেষে তারা ধরা পড়লেও অনেক ক্ষেত্রে সফল হয় বলে দাবি করেছেন মালয়েশিয়ার জন্য ক্যাম্প ছেড়ে যাওয়া অনেকে। 

আরও পড়ুন: মুজিব বর্ষে আমাদের অঙ্গিকার সবার কর্মসংস্থান: অর্থমন্ত্রী

সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুর রব জানালেন, অনেক সময় দালালরা প্রতারণার আশ্রয় নেয়।  তারা সাগরে ট্রলার অপেক্ষা করছে উল্লেখ করে যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়।  মালয়েশিয়া নিয়ে যাবার নামে ট্রলারে তুলে সাগরে দু-তিন দিন ঘুরিয়ে টেকনাফের কোনো এলাকায় নামিয়ে দিয়ে বলে, তারা মালয়েশিয়ার তীরে পৌঁছেছে।  গত বছরের শেষ সময়ে শাহপরীরদ্বীপ পশ্চিম চর এবং মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপে পৃথকভাবে অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গাকে এভাবে চরে নামিয়ে দেয় প্রতারক দালালরা।  পরে বিজিবি ও পুলিশ উদ্ধার করে ক্যাম্পে পাঠায়। 

অপর এক সূত্র জানিয়েছে, জনপ্রতি টাকা হাতে চলে এলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচিত কোনো বিভাগের সদস্যদের তথ্য দিয়ে জড়ো হওয়া রোহিঙ্গাদের ধরিয়ে দেওয়া হয়।  এসময় দালালরা সটকে পড়ে।  এতে কিছু না করেই মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। 

ইত্তেফাক/এসি