শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

লুট হওয়া ইয়াবা উদ্ধার, ছাত্রলীগ নেতসহ গ্রেফতার ৩

আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২২:২৭

কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর মাঝিরঘাট থেকে খালাসকালে লুট হওয়া বিপুল পরিমাণ ইয়াবা থেকে দুই লাখ পিস জব্দ করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। এ ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল আবদুল্লাহসহ লুটে সংশ্লিষ্ট তিনজনকে আটক করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। মঙ্গলবার রাতের প্রথম প্রহরে ইয়াবাসহ তাদের আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার ডিবি পুলিশের ইনস্পেক্টর মানস বড়ুয়া। আটকরাসহ আটজনকে পলাতক দেখিয়ে মামলা করেছে পুলিশ।   

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, কক্সবাজার পৌরসভার টেকপাড়া মসজিদ রোড় এলাকার মৃত আবদুল করিমের ছেলে মো. ফয়সাল আবদুল্লাহ (৩০), সদরের খুরুশকুল কুলিয়াপাড়ার মৃত ফজল মিয়ার ছেলে মো ফিরোজ (৩২),  মৃত সোলতানের ছেলে মো. মোস্তাক আহম্মেদ লালু (৩৬)। এদের মধ্যে ফয়সাল আবদুল্লাহ জেলা ছাত্রলীগের সদস্য ও সশস্ত্র ক্যাডার হিসেবে পরিচিত।     

পলাতকরা হলেন, কক্সবাজার শহরের উত্তর রুমালিয়ারছড়ার মো. মালেকের ছেলে বিলাই হোসেন (৩২), মাঝিরঘাট সৈয়দ কোম্পানির বরফ মিলের পাশের মৃত ফরিদের ছেলে ইফতেখার খান বাবু (২৪), টেকপাড়ার মুবিন বহদ্দারের ছেলে নাসির (৩০), মাঝিরঘাটের আবু ছৈয়দ কোম্পানির ছেলে মুজিব (২২), হাঙ্গরপাড়ার মো. বাশি প্রকাশ বাঁশি বহদ্দারের ছেলে বুলু মিস্ত্রি (৩৩),  পেশকার পাড়া বেড়িবাধ এলাকার খোরশেদ আলমের ছেলে তানভীর (২১), পশ্চিম টেকপাড়ার গোলাম মাওলা বাবুল প্রকাশ জজ বাবুলের ছেলে কায়সার (২৮) ও মো. মিজান (৩২ )।

ডিবির ওসি মানস বড়ুয়া জানান, গণমাধ্যমে  প্রকাশিত সংবাদ ও গোপনে জানতে পারি গত ৮ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার শহরের মাঝিরঘাট এলাকায় ইয়াবার একটি বড় চালান প্রবেশ করে। খবর পেয়ে পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় ইয়াবা চালান উদ্ধার ও জড়িতদের গ্রেফতারের তৎপর হই। পরে ২৪ ফেব্রুয়ারি দিনগত রাতে খবর পাই উক্ত ইয়াবা চালানের একটি অংশ কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল ইউপির কুলিয়াপাড়াস্থ মোস্তাক আহম্মেদ লালুর বসত বাড়িতে মজুদ করে ভাগ-বাটোয়ারা করছে। তখনই সঙ্গীয় অফিসার-ফোর্সসহ মোস্তাকের বাড়িতে হাজির হলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা পালানোর চেষ্টা করে। তখন ফিরোজ ও মোস্তাককে আটক করা হয়। তাদের কয়েকজন সহযোগী পালিয়ে যায়। উপস্থিত সাক্ষীদের সামনে ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করে তাদের কাছে এক লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট রয়েছে। 

এ সময় মোস্তাকের  রুমের খাটের নিচ হতে একটি চটের বস্তার ভিতর রক্ষিত ১০ বান্ডিলে রাখা এক লাখ ইয়াবা জব্দ করা হয়। ধৃতদের স্বীকারোক্তিতে তাদের সহযোগী হিসেবে ফয়সাল আবদুল্লাহকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা জানায় ফয়সালের সহযোগিতায় লুণ্ঠিত ইয়াবাগুলো বিকিকিনির চেষ্টা করা হচ্ছিল এবং অপর পলাতক আসামি মিজানের যোগসাজশে মিয়ানমার হতে অবৈধ পথে ইয়াবাগুলো কক্সবাজারে আনে। 

আরও পড়ুন: রাবির শেখ হাসিনা ও কামারুজ্জামান হল ভিত্তি প্রস্তরেই সীমাবদ্ধ

ওসি মানস আরো জানান, উদ্ধার ইয়াবা ছাড়াও চালানের বড় একটি অংশ মিজানের কাছে এবং আরেকটি বড় অংশ পশ্চিম লারপাড়া গ্যাস পাম্পের পিছনে মোক্তার প্রঃ মোক্তার মেম্বারের ছেলে মোঃ শহিদ (৩৮) ও মো. বোরহানের (২৭)  কাছে রয়েছে। সেখানে অভিযান চালিয়ে আরো এক লাখ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় পৃথক মামলা হয়েছে।  

অপর এক সূত্র জানায়,  ৮ ফেব্রুয়ারি ইয়াবা লুটের পর প্রথমে মোস্তাকের নৌকা করে ইয়াবার একটি অংশ নিয়ে যাওয়া হয়। পরে লুটকৃত ইয়াবার ওই অংশটি রাখা হয় তার ভাই রমজানের বাসায়। 

এ দিকে, ইয়াবা লুটের সঙ্গে জড়িত তিনজনকে ২ লাখ ইয়াবাসহ পুলিশ আটক করলেও ইয়াবা লুটে নেতৃত্ব দেওয়া জেলা পুলিশের তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারী মিজান গত ২০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে বিমানযোগে দেশ ত্যাগ করেছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। ইয়াবা লুটের প্রধান হোতা মিজান বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। বিষয়টিও ইমিগ্রেশনের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছেন কক্সবাজার জেলা পুলিশ।

অপরদিকে, জেলা ছাত্রলীগের সদস্য ফয়সাল আটক হবার তথ্য প্রচার পাবার পর সর্বত্র নানা গুঞ্জন চলছে। আলোচনায় স্থানপায় সোমবার ভোররাতে নারীসহ আটক কাজী রাসেলের সহযোগী হিসেবে পর্যটন ও শহরের বিভিন্ন এলাকায় অপকর্ম চালাতেন ফয়সাল। এছাড়াও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমদ জয়ের বিশ্বস্ত কাছের জন হিসেবে ফয়সাল প্রশাসনসহ সবখানে দাপটে চালাতেন। বিভিন্ন সময় অত্যাধুনিক অস্ত্র, ওয়াকিটকি এবং বিদেশি কুকুরসহ তার বেশ কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যা নিয়ে ট্রল হলেও কেউ মুখখোলার সাহস পায়নি। মঙ্গলবার ভোররাতে ফয়সাল আটক হবার পর জেলা ছাত্রলীগ সভাপতির তদবিরে তাকে ক্যামেরার সামনে আনা হয়নি বলে দাবি করেছেন অভিযানকারী এক কর্মকর্তা।

জেলা ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল আটক ও তদবির সম্পর্কে জানতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমদ জয়ের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। রিং হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।                
     
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, ইয়াবা লুটকারীদের ধরতে পুলিশ ইতিপূর্বে ঘটনাস্থলসহ সম্ভাব্য স্থানে কয়েক দফা অভিযান চালিয়েছে। এই ইয়াবার চালানের সঙ্গে জড়িত এবং লুটকারীদের সনাক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি একটি সফল অভিযানও হয়েছে। বাকিদের ধরতে অভিযান চলমান রয়েছে  বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিকালে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর মাঝিরঘাটস্থ আবু ছৈয়দ কোম্পানির জেটিতে মাছ ধরা ট্রলারে করে ইয়াবার একটি বিশাল চালান খালাস হয়। জেটি দিয়ে কূলে তোলার সময় স্থানীয় তালিকাভুক্ত অপরাধী মিজানের নেতৃত্বে তার বাহিনী ইয়াবার চালানটি লুট করে।

মিজানের নেতৃত্বে তার বাহিনীতে ওই সময় ছিলো তার ছোট ভাই কায়সার, জেটির মালিকের ছেলে মুজিব, ইফতেখার খান বাবু, সাইফুল, জুনায়েত, নাছির মিয়া, ভুলু মিস্ত্রি, বাদশা, তানভিরসহ আরও কয়েকজন। লুটের সময় জেটিঘাটে ইয়াবার মালিক বোরহান, তার ভাই শহীদ ও তাদের পার্টনার সাইফুল এবং আবুল কালামের সঙ্গে মিজান বাহিনীর সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে অস্ত্রের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয় ইয়াবার মালিকরা।

ইত্তেফাক/এসি