মাসদাইরে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার ৩৩ জন ৪৯ বছরেও শহিদের স্বীকৃতি পায়নি। নিহতদের পরিবারকে বার বার আশ্বাস দেওয়ার পরও তাদের সরকারি কোনো স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। দুই বছর আগে নারায়ণগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স উদ্বোধনকালে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এই প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে নিহতদের স্বীকৃতি দেওয়া হবে। দুই বছর পার হলেও শহিদদের নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে শুরু করে প্রশাসনের কেউই কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। শুধু একটি স্মৃতিফলক নির্মাণের মধ্য দিয়েই দায় সারা হয়েছে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাক বাহিনী বাঙালিদের ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলে গণহত্যা। ঢাকা গণহত্যার শহরে পরিণত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলাসহ আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পর তত্কালীন ইপিআর প্রথম পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ২৬ মার্চ পাক হানাদার বাহিনী ঢাকার পাশের শহর নারায়ণগঞ্জে প্রবেশের চেষ্টা করে। এর আগেই ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কের পাগলা থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত পথে পথে ট্রেনের বগি ফেলে ও বড়ো বড়ো গাছ কেটে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। পাক বাহিনী ফতুল্লার মাসদাইর পর্যন্ত বিভিন্নভাবে ব্যারিকেড সরিয়ে আসতে পারলেও মাসদাইর বর্তমান পুলিশ লাইনের কাছে এসে বাধাপ্রাপ্ত হয়। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তত্কালীন এমএলএ একেএম সামছুজ্জোহা ও আফজাল হোসেনের সামগ্রিক তত্ত্বাবধানে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এখানে পাক বাহিনীকে ২৬ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রাখা হয়। আর এর ফলে পাক বাহিনী ৩৩ জনকে নির্মমভাবে হত্যার পর ২৭ মার্চ দুপুরে শহরে প্রবেশ করে।
কেরানীগঞ্জের পানগাওয়ে বসবাসকারী মোহাম্মদ হোসেন এই হত্যাকাণ্ডের একজন প্রত্যক্ষদর্শী। মোহাম্মদ হোসেন সেদিনের ঘটনা বলতে গিয়ে আবেগআপ্লুত কণ্ঠে বলেন, শহিদ পরিবারের সদস্য হয়েও আমরা কোনো সম্মানী তো দূরের কথা আমাদের স্বীকৃতি পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। তার চাচাসহ পাঁচ জনকে হত্যার সময় মোহাম্মদ হোসেন নিজেও গুলিবিদ্ধ হন। পাক বাহিনী মোহাম্মদ হোসেন মারা গেছে ভেবে চলে যায়।
পঙ্গু এই মুক্তিযোদ্ধার মো. হোসেন ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও মুক্তিযুদ্ধের কোনো সুফল ভোগ করিনি। মুক্তিযোদ্ধার সম্মানটুকু অদ্যাবধি পাইনি। সরকারি সুযোগ-সুবিধা তো দূরের কথা, কেউ এ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের সেই অবদানকে স্মরণ করে আমাদের স্বীকৃতিটুকুও দেয়নি।
এ ব্যাপারে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অনেক কিছু করছে কিন্তু আমরা চাই নারায়ণগঞ্জের শহিদদের স্বীকৃতি দেওয়া হোক।
ইত্তেফাক/বিএএফ