শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর কাছে হার মানলেন সুমন

আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২০, ০৫:৪৮

‘আমার করোনা হয়নি অথচ পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে করোনার জন্যই আমাকে মারা যেতে হবে...’ ব্যক্তিগত ফেসবুকে সুমন চাকমার সেই স্ট্যাটাস সত্যি হলো। তার সেই শঙ্কা বাস্তবে পরিণত হলো। গতকাল সোমবার চিকিত্সাবঞ্চিত হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র সুমন চাকমা।

চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরেও ‘সেবাকে ব্রত হিসেবে নেওয়া’ চিকিৎসকদের কারো মন গলাতে পারেননি। করোনার আতঙ্কে সবাই ফিরিয়ে দিয়েছেন হাসপাতালের গেট থেকে। উপায় না পেয়ে গ্রামের বাড়ি ফিরে গেছেন। সেখান থেকে একেবারে না ফেরার দেশেই চলে গেলেন সুমন চাকমা।

গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সুমন। তার বাবা সুপেন চাকমা বিষয়টি নিশ্চিত করেন। করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে চিকিত্সাবঞ্চিত হয়ে সুমন মারা যান।

খাগড়াছড়ি জেলা সদর উপজেলার আগালাশিং পাড়ার দাতকুপ্যা গ্রামের বাসিন্দা সুমন। পড়তেন ঢাবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে। তিনি ২০১৫-১৬ সেশনের ছাত্র ছিলেন। পাহাড়ি জীবনের নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে এক বুক স্বপ্ন দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন।

২০১৮ সালের জুনে হঠাৎ তার ফুসফুসে বাসা বাঁধে ক্যানসার। সমাজের বিত্তবানদের সহায়তায় চিকিৎসাও চলছিল তার। ভারতে চিকিৎসা নিয়ে দেশে আসেন। ক্যানসারের কারণে ঘাড়ে ও পিঠে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হলে বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ওষুধের জন্য ভারতের চিকিত্সাসম্পর্কিত বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিতে দেখা যায় তাকে। তার ঘনিষ্ঠ ও ইনস্টিটিউটের ছাত্র আসিফ আলম সুমনকে নিয়ে ফেসবুকে লেখেন, ‘কদিন আগেই শেষ কথা হয়েছিল সুমনের সঙ্গে। অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছিল সুমন। ফুসফুসে টিউমার নিয়েও জীবন যুদ্ধে হাল ছাড়েনি। ঢাকা ও ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিত্সা শেষে আবার আইইআরে ফিরেছিল হাসিমাখা ওই মুখটা। আইইআরের প্রতিটা শিক্ষক-শিক্ষার্থী সুমনের এই লড়াইয়ের ইতিহাসের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সাক্ষী। সুমন চাকমার বাবা সুপেন চাকমা জানান,

‘বাংলাদেশ ও ভারতে চিকিত্সার পর। এ বছর সুস্থ হয়ে ক্লাস শুরু করেছিল। তৃতীয় বর্ষের মিড পরীক্ষা দেওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায় করোনার ভাইরাসের বিস্তারে। সেই ছুটিতে বাড়িতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। চকিত্সার জন্য ঢাকার পাঁচ-ছয়টি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও কেউ করোনার ভয়ে তার চিকিত্সা দেয়নি। নিরুপায় হয়ে ঢাকা থেকে ডাক্তার না দেখিয়েই বাড়ি চলে আসতে হয় সুমনকে।’

ইত্তেফাক/এমআর