শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

২০১৮’তে গাইবান্ধায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪১, আহত ৩৬২

আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮, ২১:২৪

গাইবান্ধার সীমানায় পড়া ঢাকা-রংপুর জাতীয় মহাসড়কের ৩২ কি.মি. অংশে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে নিহত ও আহত হওয়ার সংখ্যাও বেড়েছে। গত এক বছরে (২০১৮ সাল) ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৩৬টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪১ জন ও আহত ৩৬২।

গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কার্যালয় সূত্রের সাল ওয়ারি হিসেবে দেখা গেছে, বিগত ২০১৭ সালে এই অংশে ৮৬টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত ও ১৭৮ জন আহত হয়। ২০১৬ সালে ৭৪টি দুর্ঘটনায় নিহত হন ১৮ জন ও আহত ১৬২ জন, ২০১৫ সালে ৩০টি দুর্ঘটনায় নিহত হন ১৯ জন ও আহত ১৭ জন ও ২০১৪ সালে ২৫টি দুর্ঘটনায় নিহত হন ১১জন ও আহত আটজন।

এসব সড়ক দুর্ঘটনার জন্য প্রাথমিক অবস্থায় পুলিশ খুঁজে পেয়েছে ১০টি কারণ ও ফায়ার সার্ভিসের মতে আটটি কারণ। এছাড়া দুর্ঘটনা রোধে ২০১০ সালের মাঝামাঝি অ্যাকসিডেন্ট রিচার্জ ইন্সটিটিউট নামে বুয়েটের একটি সমীক্ষা দলের গবেষণার রিপোর্টও প্রকাশ পেয়েছে।

পুলিশের অনুসন্ধানে দুর্ঘটনার কারণগুলো হচ্ছে- দূরপাল্লার গাড়িতে মাত্র একজন চালক থাকা ও একটানা গাড়ি চালানো (আপ-ডাউন ট্রিপ মারা), অদক্ষ ও অসচেতন চালকের কারণে রাতে আলোর গতি সম্পর্কে না জানা, কোনো কোনো স্থানে সড়কের সাইড সোলডারিংয়ে অনেক উঁচু-নিচু থাকা, দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় রোড ডিভাইডার না থাকা, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, সচেতনতার জন্য সড়কের ধারে লাগিয়ে রাখা ট্রাফিক সিগন্যাল না মানা, নিয়ম না মেনে ওভারটেক করা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কের নামানো এবং হেলপার কর্তৃক দূরপাল্লার গাড়ি চালানো।

আরো পড়ুন: কাজের মেয়েকে যৌন নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন প্রেসিডেন্ট দুতার্তে, নিন্দার ঝড়

গোবিন্দগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ব্যবস্থাপক আবদুল হামিদ বলেন, দুর্ঘটনার কারণগুলো হল যানবাহনের চালক ও তাদের সহকারীদের অসচেতনতা, বেপরোয়া গাড়ি চালানো, চালকের চোখে ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে গাড়ি চালানো, দ্রুতগতিতে একটি বাস আরেকটিকে অতিক্রম করা, অধিক যাত্রী ও মালামাল বহন, ক্রটিপুর্ণ যানবাহন চালানো, অদক্ষ চালক দ্বারা গাড়ি চালানো এবং মহাসড়কে অধিক মোড় কিংবা বাঁক।

 তিনি আরো বলেন, চালক ও তাদের সহকারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, গাড়ির গতিনিয়ন্ত্রক মিটার স্থায়ী (ফিষ্ট করা) করা এবং চালক ও যাত্রীদের সিটবেল্টের ব্যবস্থা করলে দুর্ঘটনা কমবে।

গাইবান্ধা সড়ক ও জনপথ বিভাগ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গাইবান্ধার সীমানায় পড়া গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ফাঁসিতলা থেকে সাদুল্লাপুর উপজেলার ধাপেরহাট পর্যন্ত জাতীয় মহাসড়কের ৩২ কি. মি. অংশের তেরটি বাঁক মধ্যে সাতটিকে অধিক দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করেছে অ্যাকসিডেন্ট রিচার্জ ইন্সটিটিউট নামে বুয়েটের একটি সমীক্ষা দল।

গাইবান্ধা সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বর্তমানে মহাসড়কে বাঁক সোজাকরণের কোনো প্রকল্প নেই। তবে দুর্ঘটনা রোধে নয়টি বাঁকের মধ্যে পাঁচটিতে মহাসড়ক প্রশস্ত করে ডিভাইডার নির্মাণ করা হয়েছে। অন্য চারটি বাঁকে ডিভাইডার নির্মাণের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

পলাশবাড়ী উপজেলার নুনিয়াগাড়ি এলাকার ট্রাকচালক জায়দাল মিয়া বলেন, মহাসড়কে যখন বাঁক আসে, তখন বিপরীত দিক থেকে যানবাহন আসছে কিনা বোঝা যায় না। ফলে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা বাঁকেই ঘটছে। কখনো মুখোমুখি কখনো অতিক্রম করতে গিয়ে খাদে পড়ে দুর্ঘটনা কবলিত হচ্ছে যানবাহন।

অপরদিকে ২০১২ সালের জুলাই মাসে জেলা পুলিশের উদ্যোগে মহাসড়কের মোট নয়টি স্থানে সতর্কতামূলক বিশেষ কালি দিয়ে লেখা সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়। যাতে চালকরা স্পষ্টভাবে দেখে সতর্ক হতে পারেন। কিন্তু তারপরও দুর্ঘটনা কমছে না। তবে গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মো. আখতারুজ্জামানের দাবি, মহাসড়কের বাঁকে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়ার পর দুর্ঘটনা কমেছে।

গাইবান্ধার পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান মিয়া বলেন, মহাসড়কের গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বোয়ালিয়া এলাকায় চালকদের বিশ্রামের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে পুলিশের উদ্যোগে হাত-মুখ ধোয়া ও চা-নাস্তার ব্যবস্থা রয়েছে।

ইত্তেফাক/বিএএফ