শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

প্রসূতিকে ভর্তি না করে ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন

আপডেট : ২৮ মে ২০২০, ১৭:২০

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক প্রসূতিকে ভর্তি করে না করে ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত সোমবার সন্ধ্যায় ওই প্রসূতিকে ফিরিয়ে দেওয়া হলে হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনেই তিনি সন্তান প্রসব করেন। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার গাইবান্ধা সিভিল সার্জন একটি ও গত বুধবার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পৃথক অপর আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।  

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাহিনুল ইসলাম মণ্ডল জানান, এঘটনায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনি ডা. শামীমা বেগমকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্তটিম গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সুরঞ্জন কুমার ও মিডওয়াইফ রিনা আকতার। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। 

গাইবান্ধা সিভিল সার্জন ডা. এবিএম হানিফ জানান, এই ঘটনায় গাইবান্ধা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. গোলাম মেস্তাফাকে প্রধান করে অপর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন, সদরের মেডিকেল অফিসার ডা. ডায়না সরকার ও পাবলিক হেলথ নার্স মাসুমা খাতুন। এই কমিটিও আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদ জমা দিবেন। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন: গাছ কেটে বেচে দিলেন বিদ্যালয়ের সভাপতি, অভিযোগের পরও নীরব পুলিশ

প্রসঙ্গত. ঈদের দিন সোমবার বিকালে উপজেলা জামুডাঙ্গা ( বাঁধেরমাথা) গ্রামের প্রসূতি মা রাশেদা বেগমের (৩৫) প্রসব বেদনা উঠে। তখন তার স্বামী হতদরিদ্র বাদশা মিয়া তাকে রিকশা-ভ্যানযোগে সাদুল্লাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। এ সময় ওখানে দায়িত্বরত সেবিকা বাসনা রাণী কোনো পরীক্ষা না করেই তাকে গাইবান্ধায় নিয়ে যেতে বলেন। তারপরও তিনি এই প্রসূতিকে ভর্তি করে নিতে সেবিকা বাসনাকে একাধিকবার অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি কিছুই শোনেন নি। পরে বেরিয়ে আসার সময় পথে ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূল ফটকেই একটি ফুটফুটে নবজাতক (ছেলে) প্রসব করেন। এরপর প্রসূতি মায়ের প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকলে উৎসুক জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঘেরাও করে। পরে বাধ্য হয়ে কর্তৃপক্ষ তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে নেন। বর্তমানে ওই নবজাতক ও প্রসুতি মা সুস্থ আছেন। 

এনিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে ওই সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মিঠুন কুমার বর্মণ বলেন, রোগী নারী হওয়ায় আমি তাকে দেখি নাই। কর্তব্যরত সেবিকা বাসনা রাণী ওই রোগী দেখেন। কিন্তু রোগীর অবস্থা খারাপ থাকায় তাকে তিনি গাইবান্ধা রেফার্ড করেন।  

কর্তব্যরত সেবিকা বাসনা রাণী জানান, ওই প্রসূতি সন্তান প্রসবের জন্য বাড়িতেও চেষ্টা করা হয়েছিল। ফলে রোগীর অবস্থা খারাপ ছিল। এই জন্য তাকে গাইবান্ধা রেফার্ড করা হয়েছে। 

গাইবান্ধার একাধিক সুধিজন বলেন, এরআগেও গাইবান্ধা সরকারি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে গত ৬ এপ্রিল এরকম একটি ঘটনা ঘটে। ওখানে দায়িত্বরত পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা রোগী (প্রসুতি মা) ভর্তি করে না নেওয়ায় ওই কেন্দ্র থেকে মাত্র ২০০ গজ দুরে শহরের মধ্যপাড়ায় সড়কে ওই ইজিবাইকের ভিতরেই একটি ফুটফুটে নবজাতক (ছেলে) প্রসব করেন। এই বিষযটি নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু তারপর বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। ফরে পুণরায় এধরণের ঘটনা ঘটে। 

ইত্তেফাক/এসি