শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

করোনাযুদ্ধে মানুষের সহযোগিতায় ‘সংযোগ : কানেক্টিং পিপল’

আপডেট : ২৯ মে ২০২০, ০১:০৯

একদিকে করোনা মহামারি। অন্যদিকে আম্ফানের ভয়াবহতা। করোনায় প্রতিদিন মারা যাচ্ছে মানুষ। হচ্ছে আক্রান্ত। লকডাউন ও ব্যবসায়িক কার্যক্রমের স্থবিরতা নানা শ্রেণি পেশার মানুষকে ফেলে দিয়েছে বিপদে। 

এর সঙ্গে আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মানুষ। হারিয়েছে ঘরবাড়ি। আর এই দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে ফেসবুক ভিত্তিক সংগঠন ‘সংযোগ: কানেক্টিং পিপল’। 

হাসপাতালের ডাক্তার, পুলিশ, সাংবাদিকদের জন্য পৌঁছে দিচ্ছে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই)। খাবারের কষ্টে থাকা মানুষের কাছে খাদ্য সহায়তা নিয়ে হাজির হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। অভাবে থাকা মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে নগদ অর্থ সহায়তাও। 

দেশের করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে দাঁড়াতে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজির (বুয়েট) একদল সাবেক শিক্ষার্থীসহ আর বিভিন্ন পেশার কিছু তরুণের প্রচেষ্টা এই ‘সংযোগ: কানেক্টিং পিপল’। 

ফেসবুক গ্রুপে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সংযোগ : কানেক্টিং পিপল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এটি মূলত দুর্যোগপীড়িত মানুষের পাশে কীভাবে থাকা যায়, সেই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে। এরা কোনো তহবিল সংগ্রহ করে না। এটি শুধু দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে ‘সংযোগ’ ঘটিয়ে দেয়।

সংগঠনটি এরই মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ এবং ঢাকা শিশু, হলি ফ্যামিলি, কুয়েত মৈত্রী, রংপুর ও রাঙামাটি সদরসহ অনেক হাসপাতালে পিপিই, মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম পৌঁছে দিয়েছে। 


পিপিই দিচ্ছে সংগঠনটি। ছবি: সংগৃহীত

এ ছাড়া সংগঠনটি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন, কুমিল্লা, ভোলা, পঞ্চগড়, রাঙামাটি, আখাউড়া, সিরাজগঞ্জ, যশোর, পাবনা, ঠাকুরগাঁও, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ও মাদারীপুরের শিবচরে চিকিৎসকদের চাহিদা অনুযায়ী স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে। 

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের গ্রাউন্ড সার্ভিস ডিপার্টমেন্টের কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মাত্র এক ঘণ্টায় সেখানে ৭০০ পিপিই পৌঁছে দিয়েছে সংযোগ। সারা দেশে এ পর্যন্ত প্রায় চার হাজার মেডিকেল গাউন, ১০ হাজার মাস্ক ও দুই হাজার বোতল হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণের কাজ করেছে সংযোগ পরিবার। ডাক্তারদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জন্য মাস্ক ও সেনিটাইজার পৌঁছে দেয়ার কাজটিও করছে সংগঠনটি।

শুধু চিকিৎসা-সহায়তা নয়, সংযোগ দেশের বিভিন্ন প্রান্তিক শ্রেণি পেশার মানুষের প্রতি খাদ্য সহায়তার হাতও বাড়িয়ে দিয়েছে। সংগঠনটির সমন্বয়ের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা পেয়েছেন যমুনা পাড়ের জেলেরা, বরিশালের আগৈলঝড়া ও গৈলা উপজেলার মৃৎশিল্পীরা। 

আরও সহযোগিতা পেয়েছে বরিশালের ১৪৭টি বেদে, নেত্রকোনার ২৫০টি চর্মকার ও সিলেটের ১৮৫টি মণিপুরি পরিবারসহ বগুড়া, ভৈরব ও আশুলিয়ার নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা। সম্প্রতি চরাঞ্চল হাতিয়ায় মাদ্রাসার ৩০০ শিক্ষককে নগদ অর্থ সহায়তার আওতায় এনেছে সংযোগ। 

পাশাপাশি এলাকার ১২৩ জন এতিমকে ঈদ উপলক্ষে খাবার ও পোশাক বিতরণের কাজ সম্পন্ন করেছে। বরিশালে ৮৫ জন শিক্ষককে নগদ অর্থ সহায়তার পাশাপাশি ৩০ জন এতিম শিশুকে পায়জামা-পাঞ্জাবি কিনে দিয়ে সংযোগ পরিবার। বরিশালের বস্তিবাসীদের মেডিকেল চেক আপের জন্য দুটি থার্মাল স্কানারও পৌঁছে দিয়েছে সংগঠনটি। 

এমনকি খুলনার বানিয়াশান্তে যৌনকর্মীদের জন্য এক মাসের খাবার ও ১০০ প্যাকেট স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ করেছে সংযোগ। এর আগে ‘টিচার কোভিড এইড’ কার্যক্রমের আওতায় ঢাকার সাভারের আশুলিয়া, কিশোরগঞ্জ, কক্সবাজার, মুন্সিগঞ্জ ও  ভৈরবের পাঁচ শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, গাজীপুর, বরিশাল ও ঢাকার খিলক্ষেতের মাদ্রাসাশিক্ষকদের মাঝে খাদ্য ও নগদ টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে সংযোগ। 

পিপিই দিচ্ছে সংগঠনটি। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি করোনায় সুস্থ হয়ে যাওয়া প্লাজমা দিতে আগ্রহীদের জন্য একটি ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। যারা প্লাজমা দিতে আগ্রহী, তারা এখানে তথ্য দিতে পারবেন এবং যাদের প্লাজমার দরকার তারা গ্রুপে প্লাজমা চেয়ে আবেদন জানাতে পারবেন। এছাড়া সাতক্ষীরার আম্ফান আক্রান্ত দুই গ্রামে খাবার, ঘরবাড়ি নির্মাণ, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। 

সংগঠনটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ জাভেদ জামাল। পেশায় প্রকৌশলী। তিনি সংযোগের কার্যক্রম সম্পর্কে বলেন, ‘করোনার ভয়াবহতার মধ্যে আমরা মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। যারা নানা ধরনের সমস্যা আছেন, তারা নিয়মিত আমাদের গ্রুপে সেগুলো জানান। যাদের মাস্ক বা পিপিই-এর সংকট আছে, তারাও যোগাযোগ করেন আমাদের সঙ্গে। আমরা তাদের চাহিদাগুলো গ্রুপে জানাই। বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠানকে জানাই। এবং সবাই মিলে সবার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি।’ 

সংগঠনটির আরেক প্রতিষ্ঠাতা আবু আহমেদ মোবাশ্বেরুল করিম সিজার বলেন, ‘সংযোগের মাধ্যমে আমরা প্রতিনিয়ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের প্রচেষ্টায় সামিল হচ্ছেন বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত প্রকৌশলীসহ দেশের অসংখ্য সংবেদনশীল মানুষ। বিভিন্ন সামাজিক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নানা সহযোগিতা নিয়ে সংযোগের মাধ্যমে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।’

‘এর মধ্যে রয়েছে স্নোটেক্স গ্রুপ, মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, অঙ্কুর ইন্টারন্যাশনাল, কেয়ার এ্যান্ড শাইন, বাংলাদেশ ইমার্জেন্সি একশন এগেইন্সট কোভিড-১৯ (বিকন এইড), বুয়েটিয়ান ইনভেস্টমেন্ট নেটওয়ার্ক (বিন), পে ইট ফরোয়ার্ড, বাংলাদেশ আর্মার গ্রুপ, উর্মিগ্রুপ, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বরিশালসহ অনেক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান। আমরা সংযোগ পরিবারের পক্ষ থেকে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’

ইত্তেফাক/জেডএইচ