বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

হামাগুড়ি দিয়ে স্বপ্ন জয়

আপডেট : ০২ জুন ২০২০, ১০:৪৭

জন্ম থেকেই দুই পা উল্টো সরু ও বাঁকা। তবুও স্বপ্ন জয়ে বিভোর। শত বাধা উপেক্ষা করে হামাগুড়ি দিয়ে এবার পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে এসএসসি পাস করল প্রতিবন্ধী আজহারুল। সে বালালী বাঘমারা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ২.৮৯ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। তার এই সাফল্যে হতবাক করেছে অনেকেই। তবে আরো ভালো ফলাফল করার ইচ্ছে ছিলো তার। এখন সে স্বপ্ন দেখছে ভালো কলেজে লেখাপড়া করে সরকারি ভালো একটি চাকুরি করার।

আজহারুলের বাড়ি নেত্রকোনার মদন উপজেলার বনতিয়শ্রী গ্রামে। তার রয়েছে তিন ভাই, তিন বোন।  ভাই বোনদের মধ্যে পাঁচ নম্বর সে । অভাবী সংসারে প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেয়া আজহারুল ছোটবেলা থেকেই সমাজের মানুষের অবহেলা আর হোঁচট খেয়ে বড় হয়েছে। তার দুই হাতও বাঁকা। এরপরও দুই হাতের ওপর ভর করে স্বপ্ন জয়ের পথে এগিয়ে চলছে সে। অদম্য ইচ্ছা আর স্বপ্ন জয়ের দারুণ আগ্রহ রয়েছে তার। এ জন্য বাড়ি থেকে প্রতিদিন তিন কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে কোনোমতে হামাগুড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে আসত আজহারুল। বাবা মনির উদ্দিনের ভিটেবাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই। তার বাবা দিনমজুরি করে সংসার চালান।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পাঁচ বছর ধরে দুই হাতে ভর করে হামাগুড়ি দিয়ে তিন কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে বিদ্যালয়ে নিয়মিত আসত আজহারুল। যদি অটো কিংবা রিকশা দিয়ে আসতে হয় তাহলে প্রতিদিন খরচ হয় ৫০ টাকা। কিন্তু দিনমজুর বাবার পক্ষে এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব না। তাই তিন কিলোমিটার রাস্তায় অতিক্রম করে হামাগুড়ি দিয়ে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসত আজহারুল। সে প্রাথমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ২ দশমিক ৮৩ পেয়ে কৃতকার্য হয়। জেএসসিতে পায় ২ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট।

আজহারুল ইসলাম জানায়, লেখাপড়া শিখে আমি একজন সরকারি চাকরিজীবী হতে চাই। এ জন্য প্রতিদিন স্বপ্ন দেখছি বড় হওয়ার। সরকারি সুযোগ সুবিধা পেলে ভালো একটি কলেজে ভর্তি হতে হবে।  

আজহারুলের বাবা মনির উদ্দিনের মিয়া বলেন, আমরা গরীব মানুষ, তাকে পড়া লেখা করাতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। আমরা এমনিতেই চলতে পারছি না। সরকারি সহযোগিতা পেলে ওকে পড়াশোনা করাতে পারব। 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়াহিদুজ্জামান তালুকদার বলেন, আজহারুল পাস করায় আমরা খুবই খুশি। আজহারুল একজন মেধাবী ছাত্র, আর্থিক সমস্যার কারণে ওকে প্রতিদিন হামাগুড়ি দিয়ে তিন কিলোমিটার রাস্তা আসতে হয়েছে। আমি চাই বিত্তবানরা যেন ওকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে।

ইত্তেফাক/আরকেজি