শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

গোয়ালন্দে নদী ভাঙন, হুমকির মুখে ঘরবাড়ি লঞ্চ ও ফেরিঘাট

আপডেট : ১৮ জুন ২০২০, ১৬:৪২

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার  দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম  ইউনিয়নে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি ও স্রোতের কারণে ভাঙনের কবলে পড়েছে পদ্মা পাড়ের হাজারও মানুষ, দৌলতদিয়া লঞ্চ  ও ফেরি ঘাট। গত বর্ষায় ভয়াবহ নদী ভাঙনের ক্ষত কাটতে না কাটতেই আবারও ভাঙন শুরু হওয়ায় আতঙ্কে পদ্মা পাগের মানুষগুলো। তবে ফেরিঘাটের ভাঙন ঠেকাতে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হলেও স্থায়ীভাবে ভাঙন ঠেকাতে নেওয়া হচ্ছে না কোনো পদক্ষেপ।

জানা যায়, গোয়ালন্দে গত এক দশকে নদী ভাঙনে সর্বশান্ত হয়ে ভূমিহীনে পরিনত হয়েছেন হাজারও পরিবার। পরিবারগুলো উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অন্যের সামান্য জমি বছর চুক্তিতে ভাড়া নিয়ে কোনমতে মাথাগুঁজে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। এর মধ্যে প্রতিনিয়ত একটু একটু করে পদ্মায় হারিয়ে যাচ্ছে গোয়ালন্দের মানচিত্র। শুধুমাত্র গত বছরের ভাঙনে গৃহহীন হয়েছে সহস্রাধিক পরিবার। স্থায়ীভাবে ভাঙন ঠেকাতে  মানববন্ধন, স্মারকলিপি পেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হলেও এ পর্যন্ত নেওয়া হয়নি কোনো পদক্ষেপ। এবারও ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে অসংখ্য পরিবার ও দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরিঘাট।

সরেজমিন, দেবগ্রাম ইউনিয়নের ২, ৪, ও ৫নং ওয়ার্ডের মুন্সী পাড়া, কাওয়াজানি ও মধ্য কাওয়াজানি এলাকায় এবং দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সাত্তার ফকির পাড়া, ২নং ওয়ার্ডের ছিদ্দিক কাজীর পাড়া, মজিদ শেখের পাড়া ও ৩নং ওয়াডের্র ১নং ব্যাপারী পাড়া, সাহাজদ্দিন ব্যাপারী পাড়া, লালু মন্ডল পাড়া, নতুন পাড়ায় ভাঙন শুরু হয়েছে। 

আরও পড়ুন: খুলনায় ডা. রকিব হত্যায় ৫ আসামি গ্রেফতার

দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, গতবারের ভাঙনে আমাদের এই গ্রামের বেশির ভাগ অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আমার বাড়ি থেকে নদী অল্প কয়েক গজ দুরে, ভাঙন শুরু হলে এবার আর এখানে থাকতে পারবো না।

২নং ওয়ার্ডের বৃদ্ধা সালেহা বেগম বলেন, ভাঙনের কবলে পড়ে কুশাহাটা থেকে ছিদ্দিক কাজীর পাড়ায় এসে ঘর তুলে বাস করছি। গতবারের ভাঙনে অল্পতে বাড়িটি রক্ষা পায় কিন্তু এবার মনে হয় আর থাকতে পারমু না। অনেকেই বাড়িঘর ভেঙ্গে চলে গেছে, আমার যাওয়ার কোন জায়গা নেই।

দৌলতদিয়া ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আবুল কাশেম বলেন, অনেকের মতো আমিও আমার ঘরবাড়ি নিয়ে আতঙ্কে আছি। আমার ওয়ার্ডের অনেক পরিবার রয়েছে যাদের সরে যাওয়ার মতো কোনো জায়গা বা আর্থিক সঙ্গতি নেই। সাধ্যমতো তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। নদী ভাঙন ঠেকানোর কথা বহু আগে থেকে শুনে আসলেও এখনো পর্যন্ত কিছুই হলো না। এবারে ভাঙন শুরু হলে হয়তো কিছুই থাকবে না।

দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম জানান, নদী ভাঙনে তার ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এবারো ২,৪, ও ৫ নং ওয়ার্ডের আংশিক এলাকা হুমকির মুখে রয়েছে। আমরা বহুবার নদী ভাঙন রোধে স্থানীয় এমপি, প্রশাসন ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আবেদন করেছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। ভরা বন্যার সময় যখন ভাঙনের তাণ্ডব শুরু হয় তখন মানুষকে শান্তনা দেওয়ার জন্য শুধুমাত্র কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হয়। তাতে অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই হচ্ছে না ।

এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবায়েত হায়াত শিপলু জানান, গত বছরে ভয়াবহ নদী ভাঙনের শিকার হয়ে বারোশ’র অধিক পরিবার সর্বশান্ত হন। এবারও চরম ঝুঁঁকির মধ্যে রয়েছে দৌলতদিয়া লঞ্চ  ও ফেরিঘাটসহ অন্তত এক হাজার পরিবার। ঘাট এলাকায় বিআইডব্লিউটিএ’র তত্ত্বাবধানে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলছে। এর বাইরে ঘাট থেকে উজানে সাড়ে চার কিলোমিটার এলাকাকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।

ইত্তেফাক/এসি