পাবনার গরু পালনকারীরা কোরবানির হাটে গরু বিক্রি নিয়ে এবার চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে জেলার প্রায় বিশ হাজার খামারি ও চাষিরা এবার কোরবানির হাটের ওপর ভরসা করতে পারছেন না। ফলে এখন থেকেই অনেক যত্ন ও ধারদেনায় বড় করা গরুগুলোকে বিক্রির চেষ্টা করছেন তারা।
কিন্তু অন্যান্য বছরের মতো এবার বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু কেনায় আগ্রহী ব্যাপারীদের দেখা নেই। এ ছাড়া ক্রেতার অভাবে হাটে নিয়েও গরু বিক্রি করা যাচ্ছে না।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় ও খামারিদের সূত্রে জানা যায়, জেলার সদর, বেড়া, সাঁথিয়া, ফরিদপুর, ঈশ্বরদী,আটঘরিয়া দেশের অন্যতম গরু লালন-পালনকারী উপজেলা বলে পরিচিত। এসব উপজেলার প্রায় দশ হাজার খামারে এবার ৫০ হাজারের বেশি গরু কোরবানির হাটকে সামনে রেখে বড় করে তোলা হয়েছে। প্রতিবছর কোরবানির হাট শুরুর মাস দেড়েক আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকার গরুর ব্যাপারীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু কেনা শুরু করেন। এ ছাড়া জেলার পশুর হাটগুলো থেকেও তারা গরু কিনে থাকেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের প্রধান সহকারী আব্দুল আওয়াল মঙ্গলবার (৩০জুন) জানান, জেলার খামারির সংখ্যা ১৯ হাজার ২৪৩ জন।খামারিরা এবার ৯০ হাজার ৩৪৪টি গরু, ৭০ হাজার ৮৬৮টি ছাগল,৯ হাজার ৩৯৬টি ভেড়া ও ৫৯২টি মহিষ কোরবানির উপযোগী করে তুলেছেন।
এদিকে গরুর খামারিরা বলছেন, কোরবানির আর মাস খানেক সময় আছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার গরু কেনায় আগ্রহী কোনো ব্যাপারীর দেখা নেই। এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন গরু পালনকারীরা। তাদের আশঙ্কা এবারের কোরবানির হাটে ক্রেতার অভাবে কম দামে গরু বিক্রি করতে হতে পারে। তাই কোরবানির হাট শুরু হতে সপ্তাহ দেড়েক দেরি থাকলেও গরু পালনকারীরা এখনই তাদের গরু বিক্রির চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
সাঁথিয়ার অন্যতম গরু খামারি কাশিনাথপুর ইউনিয়নের এদ্রাকপুর গ্রামের সোনাই শেখ। তার খামারে কোরবানির উপযুক্ত ৮টি গরু। তিনি জানান, অন্যান্য বছরে গরুর ব্যাপারীরা এত দিনে ঢাকার কোরবানির হাটকে সামনে রেখে গরু পালনকারীদের কাছ থেকে গরু কেনা শুরু করে দেন। কিন্তু এবার বেশির ভাগ ব্যাপারী ভয়ে গরু কিনছেন না।
তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে হাটে গরুর দাম কেমন হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণেই ব্যাপারীরা গরু কিনছেন না।’
বেড়া পৌর এলাকার বৃশালিখা মহল্লার খামারি আব্দুল মোমিন জানান, তার খামারে কোরবানির হাটে বিক্রির উপযোগী সাতটি বড় আকারের ষাঁড় রয়েছে। অন্যান্যবার ব্যাপারীরা বাড়িতে এসে দরদাম করে গরু কিনে নিয়ে যান। কিন্তু এবার কারোরই দেখা নেই। দামও একেবারে কম। তাই কোরবানির পরে এগুলো বিক্রির কথা ভাবা হচ্ছে।
ফরিদপুর উপজেলা খামার মালিক সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বললেন, ‘তার খামারে এবার দশটি কোরবানি যোগ্য গরু আছে। এদিকে খাবারের দাম বেশি।’ তিনি বলেন, ‘সয়াবিন বস্তা (৩০কেজি)৯০০ টাকা,এক মণ ভুসি ১ হাজার ৬০০টাকা, চালের কুড়ার বস্তা(৫০কেজি)৭০০ টাকা,ভুট্টার বস্তা(২০কেজি)৬০০ টাকা। গরুর প্রতি কেজি খাবারে সব মিলিয়ে ৫০টাকার মত খরচ হয়। গরুর ন্যায্য মূল্য যদি এ অবস্থায় না হয়, তাহলে বড় রকমের লোকসান হবে।
আরো পড়ুন: ভূঞাপুরে বন্যায় পানি বিপদসীমার ওপরে, চরম ভোগান্তিতে এলাকাবাসী
৩০ জুন সাঁথিয়ার করমজা হাটে গিয়ে দেখা যায়, প্রচুর খামারি ও চাষি গরু বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন। কিন্তু ক্রেতা নেই বললেই চলে।
সাঁথিয়ার সোনাতলা গ্রামের আলাউদ্দিন আলী, শহীদনগর গ্রামের লিয়াকত আলীসহ কয়েকজন জানান, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে গরু কিনেছেন। খাবার কিনতে হয়েছে ধারদেনা করে। এ অবস্থায় গরুর দাম না পেলে বিপদে পড়তে হবে। অন্য বছর এই সময়ে বাড়ি থেকেই গরু বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু এবার হাটে এনেও বিক্রি করা যাচ্ছে না। সামনের কোরবানির হাটে গরুর দাম নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।
করমজা পশুর হাট পরিচালনাকারীদের অন্যতম মিজানুর রহমান বলেন, ‘হাটে বেচাকেনা নাই। অন্যান্য বছর এই সময়ে মানিকগঞ্জ, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপারী দলে দলে তাদের হাটে গরু কিনতে আসেন। এবার তাদের দেখা নেই।’
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. আল মামুন হোসেন মন্ডল মঙ্গলবার ইত্তেফাককে বলেন, ‘কোরবানির পশুর হাট এখনো জমেনি।তবে এবার করোনার কারণে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে বেচা-কেনা হবে। এ ছাড়া অনলাইনের মাধ্যমে কোরবানির পশু বিক্রি এখন ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।তাই হতাশ হওয়ার কিছু নেই।’
ইত্তেফাক/এএএম