শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

রাজশাহীতে চিকিৎসা নিতে এসে ভোগান্তিতে মানুষ

আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২০, ১৯:০৮

বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে চিকিৎসা নিতে এসে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে প্রতিদিন শতশত মানুষ। ডাক্তার সংকটের কারণে উত্তর এবং দক্ষিাঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল, বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সর্বত্রই চলছে এক রকম চিকিৎসাহীনতা।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মার্চের শেষের দিকে লকডাউন শুরু হলে রাজশাহীর অধিকাংশ ডাক্তার চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ করে দেন। এই অবস্থা এখনো চলমান রয়েছে। ডাক্তার সংকটের কারণে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি বিভাগের সামনে রোগীরা অবস্থান করছেন। তাদের স্বজনরা হাসপাতালে ভর্তির জন্য ছুটাছুটি করছেন। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও রোগী ভর্তির প্রক্রিয়া শেষ হচ্ছে না। শারীরিক অবস্থা খারাপ হলেও রোগী ও স্বজনদের ভর্তির প্রক্রিয়া শেষ করতে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। 

অপেক্ষমান রোগীর স্বজন নাটোরের রোজিনা খাতুন (৩৫) বলেন, তার পাঁচ বছরের ছেলে সিয়াম রক্তশূন্যতায় ভুগছে। সকাল ৯টায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এসেছেন। কিন্তু বেলা ১১টা পর্যন্ত ভর্তির প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেন নি। ভর্তির সময়ই যখন এই অবস্থা, তাতে ভর্তির পর পরিপূর্ণ চিকিৎসা নিয়ে আশঙ্কার কথা বলেছেন তিনি। একই ধরনের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন সেখানে উপস্থিত আরও কয়েকজন রোগী।’ এ বিষয়ে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত (ইএমও) চিকিৎসক আরিফুল ইসলাম অবশ্য বলেছেন, ‘সবাই করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। জরুরি বিভাগে চিকিৎসক এবং ওয়ার্ড বয়দের খুব সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হচ্ছে। তাই রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও বিলম্ব হচ্ছে। এ কারণে তারা আগত রোগীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।

রোগীর স্বজনের ছদ্মবেশে ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, করোনা আতঙ্কে এবং পরিপূর্ণভাবে চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোও কার্যত রোগীশূন্য হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই হাসপাতালের অন্তত ১৫/২০টি ওয়ার্ড ঘুরে ধারণক্ষমতার আংশিক রোগী চিকিৎসাধীন দেখা যায়। এসব রোগীর অধিকাংশই এক সপ্তাহ বা তার আগে থেকে ভর্তি রয়েছেন। হাজার বেডের এই হাসপাতালে ২৪ ঘন্টায় মাত্র ৫০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপে জানা গেছে। অথচ স্বাভাবিক সময়ে এই হাসপাতালের ওয়ার্ডে রোগীদের স্থান সংকুলান হয় না। তখন হাসপাতালের অধিকাংশ ওয়ার্ডের বারান্দায় এমনকি করিডোরে বেড পেতে রোগীদের অবস্থান করতে দেখা যেতো। প্রসঙ্গত, এই হাসপাতালে দীর্ঘ দিন থেকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।  

সূত্র জানায় যায়, রামেক হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নেন প্রায় এক হাজার রোগী। কিন্তু বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে বহির্বিভাগেও রোগীর উপস্থিতি খুব কম দেখা যায়। বহির্বিভাগের বিভিন্ন বিভাগে মাত্র ৫০-৫৫ জন রোগী অবস্থান করছিলেন। তাদের মধ্যে মহানগরীর উপকণ্ঠ নওহাটার ছাবের আলী বলেন, ‘কয়েকদিন থেকে কান ব্যথায় প্রচ- কষ্ট পাচ্ছেন। এজন্য হাসপাতালে এসেছেন। কিন্তু ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসা না পেয়ে বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

তবে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, তারা চিকিৎসাসেবা দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। দেশে দুর্যোগকালীন সময় চলছে। তারপরেও এই হাসপাতালের চিকিৎসক এবং সংশ্লিষ্টরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন। হয়ত কিছু ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। তারপরেও তারা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার চেষ্টা করছেন।

অন্যদিকে রাজশাহীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও মিলছে না চিকিৎসাসেবা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরে নগরীর লক্ষ্মীপুরে পপুলার রাজশাহী শাখায় দেখা যায়, প্রায় সব ডাক্তারের চেম্বার বন্ধ। এদিন সন্ধ্যায় মায়ের ভাঙা পায়ের চিকিৎসার জন্য নাটোর সদর থেকে এসেছিলেন রহমত উল্লাহ (৩৫)। ভেবেছিলেন রাজশাহীর কোনো প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ডাক্তার দেখাবেন। কিন্তু পপুলার, রয়েল ও ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল ঘুরে অর্থপেডিক্সের কোনো ডাক্তার পাননি। তিনি বলেন, টয়লেটে পড়ে তার মায়ের পা ভেঙেছে। অপারেশনের প্রয়োজন হবে। ডাক্তার না পাওয়ায় তিনি রাতেই নাটোরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন বলে পরে জানান।

লকডাউনের আগে রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা রোগী ভর্তি ও অপারেশন চলত। এই হাসপাতালে সবসময় প্রায় অর্ধশত ডাক্তার রোগী দেখতেন। কিন্তু বর্তমানে এই হাসপাতালে খুব অল্প সংখ্যক ডাক্তার রোগী দেখছেন। এছাড়া অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে চিকিৎসক সংসকট চলছে। ফলে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশন রাজশাহী জেলার সহ-সভাপতি ফয়সাল কবীর চৌধুরী বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে অনেক ডাক্তারই বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিকগুলোতে আসতে অনীহা দেখাচ্ছেন। ফলে রোগীরা ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

ইত্তেফাক/এসি