শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

রংপুরে তিস্তার পানি বেড়ে ১০ হাজার পরিবার পানি বন্দি

আপডেট : ১১ জুলাই ২০২০, ২১:২৪

উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢল এবং অবিরাম ভারি বর্ষণে রংপুরে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নদী তীর এলাকার  নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ফলে রংপুর জেলার তিন উপজেলার প্রায় ১০ হাজার পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। গঙ্গাচড়া উপজেলার বিনবিনা চরে তিস্তার পানিতে নতুন বাঁধের রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় চার হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। 

এদিকে শনিবার দুপুরে তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে বলে পানি উন্নয়ন র্বোড সূত্রে জানা গেছে। এর ফলে রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের একটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের একশ ফুট অংশ ভেঙে গেছে। 

ডালিয়া  পাউবো ব্যারাজ সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার দিনভর ভারি বর্ষণ এবং ভারত থেকে নেমে আসা পানির ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। শুক্রবার রাতে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে রংপুরের গঙ্গাচড়ার লহ্মীটারী ইউনিয়নের চর ইচলী, শংকরদহ, বাগেরহাট, জয়রাম ওঝার  প্রায় আড়াই হাজার পরিবার, কোলকোন্দ ইউনিয়নের চিলাখাল, মটুকপুর, বিনবিনার চরের প্রায় সতেরশ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।ে কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনার চরের হুমায়ুনের বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের একশ ফুট অংশ ভেঙে গিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে করে দুই হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

এছাড়া পূর্ব বিনবিনা চরের বেড়িবাঁধটি ভেঙে গিয়ে তিস্তার পানি বিনবিনাসহ বাগেরহাট, শংকরদহ এলাকা তলিয়ে গেছে। চর এলাকার পাকা রাস্তাসহ বিভিন্ন রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। মানুষজন নৌকা, কলাগাছের ভেলায় অতি কষ্টে চলাচল করছে। গবাদিপ্রাণী, ছোট শিশু ও বয়স্ক মানুষজনকে নিয়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছে। এছাড়া ভেসে গেছে পুকুর, খামার ও বিলের মাছ। রোপনকৃত আমন চারা, পাটক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসল ও আমন বীজতলা তলিয়ে গেছে। 

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের দেওয়া তথ্যমতে, উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের চিলাখাল চর, চরমটুকপুর, খলাইর চর, বিনবিনা, সাউদপাড়া, আলে কিশামত ও উত্তর কোলকোন্দ বাঁধেরধারে, নোহালী ইউনিয়নের বাগডোহরা, মিনার বাজার, চর নোহালী, বৈরাতী ও কচুয়ার, লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের শংকরদহ, চর ইচলী, বাগেরহাট, চর চল্লিশসাল, বাগেরহাট আশ্রয়ণ, কাশিয়াবাড়ি চরে, গজঘন্টা ইউনিয়নের চর ছালাপাক, রামদেব, কামদেব, মহিষাশহরে, মণের্য়া ইউনিয়নের তালপট্টি, নরসিংহ, আলাল চরে, গঙ্গাচড়া ইউনিয়নের ধামুর বাঁধেরপাড়, গান্নারপাড়, বোল্লারপাড়ে এবং আলমবিদিতর ইউনিয়নের পাইকান, হাজীপাড়া, ব্যাঙপাড়া এলাকার কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। 

কোলকোন্দ ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব আলী রাজু জানান, তিনি ভোরে পানিবন্দি এলাকা পরিদর্শন করে তাদের জন্য ত্রাণ সহায়তার জন্য পরিবারের তালিকা তৈরি করছেন। 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাসলীমা বেগম বলেন, বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পানিবন্দি মানুষজনের জন্য শুকনো খাবার, পানি বিশুদ্ধ করণ ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন উপকরণ ও ত্রাণ সহায়তার ব্যবস্থা নিয়েছেন। কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের ঢুষমারার চর, পাঞ্জরভাঙ্গা, চরগদাই, গোপিডাঙ্গা, নিজপাড়া ও তালুক শাহবাজপুরের কিছু এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। এতে করে বালাপাড়া ইউনিয়নের প্রায় ২ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এছাড়া টেপামধুপুর ইউনিয়নের চরগোনাই, হরিচরন শর্মা, বিশ্বনাথ চর, আজমখাঁ চর, টাপুর চর, হয়বৎ খার চরের ২ হাজার পরিবার আকস্মিক বন্যায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যায় ফসলী ক্ষেত, ঘর-বাড়ি ডুবে গেছে। অনেকে তিস্তা নদীর বাঁধে গবাদীপশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। বন্যায় ঘর-বাড়ি ডুবে যাওয়ায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদি হাসান জানান, শনিবার গঙ্গাচড়া এলাকায় তিস্তায় ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি। তিস্তায় অনেক পানি বেড়েছে। ওই এলাকায় ভাঙন রোধে বরাদ্দের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুত ভাঙন রোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ইত্তেফাক/এসি