শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পাত্রী দেখার আগের রাতেই খুন হলেন ওমর ফারুক

আপডেট : ১২ জুলাই ২০২০, ২৩:৪৯

পাত্রী দেখা হলো না খাগড়াছড়ির রামগড় পৌরসভার কালাডেবার যুবক মো. ওমর ফারুকের (২৮)। শনিবার (১১ জুলাই) রাতে দুর্বৃত্তের হামলায় নিহত হন তিনি। আজ রবিবার বিয়ের পাত্রী দেখার কথার ছিল তার। তিনি রামগড় পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের কালাডেবার আলী নেওয়াজের ছেলে এবং বয়ো ফার্মা ওষুধ কোম্পানির ভুজপুর এলাকার বিক্রয় প্রতিনিধি (এমআর)।

শনিবার রাত সাড়ে ১০টায়  বাড়ি ফেরার পথে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর  রাত আড়াইটার দিকে সেখানে তিনি মারা যান। রবিবার এ ব্যাপারে নিহত ফারুকের বাবা আলী নেওয়াজ রামগড় থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ এ হত্যার ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

স্বজনরা জানান, পারিবারিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওমর ফারুক রবিবার(১২ জুলাই) রামগড়ের নাকাপা বাজার এলাকায় বিয়ের পাত্রী দেখার যাওয়ার কথা ছিল। তাই ফারুক শনিবার রাত সাড় ১০টার দিকে  রামগড় বাজার থেকে পাত্রীকে  উপহার দেয়ার জন্য একটি স্বর্ণের আংটি কিনে বাড়ি ফেরেন। কালাডেবা বাজার হতে পায়ে হেঁটে বাড়ি যাওয়ার পথে আইয়ুব ভুইয়ার পারিবারিক কবরস্থান এলাকায় অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা পিছন দিক থেকে এসে শক্ত কাঠের টুকরা দিয়ে তার মাথায় এলোপাথাড়ি আঘাত করে পালিয়ে যায়। এতে তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে রাস্তার পাশে পড়ে থাকেন। এর পরপরই ইসমাঈল ও সিফাত নামে স্থানীয় দুই যুবক ঐ রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ফারুককে রক্তাক্ত অবস্থায় অচেতন পড়ে থাকতে দেখে পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী আবুল বাসারকে মুঠোফোনে খবরটি জানায়। পরে কাউন্সিলর তার বাবাসহ স্থানীয় লোকজন নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত ফারুককে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে তিনি মারা যান।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, দুর্বৃত্তরা মোটরসাইকেল যোগে এসে তার ওপর আচমকা হামলা করে কালাডেবা- বৈরাগীটিলা রাস্তা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। ঐ সময় প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল। স্থানীয় এক গৃহবধূ জানান, সন্দেহভাজন খুনিরা দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার সময় ভাঙ্গা উঁচু রাস্তায় উঠতে গিয়ে মোটরসাইকেল উল্টে যায়। অঝোর বৃষ্টির মধ্যে তারা মোটরসাইকেলটি কোন রকমে তুলে দ্রুত পালিয়ে যায়।

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র জানায়, ফারুকের হত্যার ঘটনার সাথে তার পাত্রী দেখা বা বিয়ের তৎপরতা শুরুর কোন যোগসূত্র আছে কি না বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।

নিহত ফারুকের বাবা আলী নেওয়াজ বলেন, তার ছেলে কোন রাজনীতির  সাথে জড়িত নেই। এলাকায় তার কোন শত্রু আছে বলেও তাদের জানা নেই। এলাকার সবাই তাকে ভালবাসে। ভাল জানে। রামগড় কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করার পর সে বায়ো ফার্মা ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি পদে চাকরি নিয়ে ফটিকছড়ির ভুজপুরে কাজ করতো। গত ৯ জুলাই সে ভুজপুর থেকে বাড়ি আসে। তিনি আরও বলেন, রবিবার(১২ জুলাই) রামগড়ের নাকাপা বাজারের হোসেন মেম্বারের মেয়েকে পাত্রী হিসেবে দেখার জন্য ফারুককে নিয়ে তারা সপরিবারে পাত্রীর বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল।

স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর কাজী আবুল বাসার বলেন, গুরুতর আহত অবস্থায় ফারুককে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার সময় তার পকেটে পাত্রীকে উপহার দেয়ার জন্য কেনা স্বর্ণের আংটি ও নরমাল মোবাইল ফোন সেটটি পাওয়া যায়। কিন্তু তার স্মার্ট ফোন সেটটি পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ছেলেটিকে এলাকার সবাই ভালবাসত। তিনি হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তির দাবি জানান।

এদিকে, রবিবার রামগড় পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ শাহ জাহান কাজী রিপন হত্যার ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও স্বজনদের সান্ত্বনা দিতে গিয়ে নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার পূর্বক কঠোর শাস্তির দাবি জানান।

রামগড় সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৈয়দ মো. ফরহাদ জানান, পুলিশ অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে এ হত্যার ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। জড়িতদের গ্রেফতারে জোর তৎপরতা চলছে।

রামগড় থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ শামছুজ্জামান বলেন, নিহতের বাবা বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের ক্লু উদঘাটন ও জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশ মাঠে নেমেছে। তিনি বলেন, ফারুকের বিয়ের পাত্রী দেখার ইস্যুসহ সবদিক মাথায় রেখে তদন্ত করা হচ্ছে।

ইত্তেফাক/আরএ