গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে বাঙালি নদীর বাঁধ আবারও ভেঙ্গে গেছে। ফলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় নদ-নদীর পানি সামান্য কমেছে। তবে এখনও জেলার নদ-নদীর পানি বিপদসীমার অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে প্রায় ১ মাস থেকে নিমজ্জিত জেলার ৪ উপজেলার ৬৫টি চরাঞ্চলের মানুষ। তারা চর্মরোগসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে গবাদিপশু নিয়ে। দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে নিজেদের থাকার ও খাবার যোগান দিতে যখন হিমসিম খাচ্ছেন; তখন গবাদিপশুর খাবার এবং থাকার জায়গা নিয়ে চরম দূর্ভোগে পড়েছেন জেলার আড়াই লক্ষাধিক বন্যার্ত মানুষ।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের বালুয়া গ্রামের বাঙালি নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সোমবার বিকেলে ভেঙ্গে গেছে। ফলে মহিমাগঞ্জ, রাখালবুরুজ, শিবপুর, কোচাশহর ও শালমারা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকার আখ ও উঠতি পাটসহ বিভিন্ন ফসল তলিয়ে গেছে। এছাড়া এই ৫টি ইউনিয়নের বালুয়া, পুনতাইড়, বালুয়া, শিংজানী, আমবাড়ী, বোচাদহ, ছয়ঘরিয়া, শ্রীপতিপুর, হরিনাথপুর, বিশপুকুর, কাজীপাড়া, শিবপুর, শাহপুর, কানাইপাড়া, বুড়াবুড়ি, উলিপুর, দামগাছা, শাখাহাতি, শালমারা, কলাকাটা, বাইগুনি গ্রামের নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এর আগের দিন একইভাবে এ বাঁধের দুই কিলোমিটার ভাটিতে বোচাদহ এলাকায় এই নদীর বাঁধ ভেঙ্গে গেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত বছরের বন্যায় এই দুটি এলাকায় বাঁধ ভেঙ্গে যায়। কিন্তু চলতি বছর গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসিনতায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সামান্য কিছু কাজ করে রহস্যজনক কারণে হাত গুটিয়ে বসে থাকেন। এ কারণেই কাজটি আর শেষ না হওয়ায় প্রবল বেগে পানি ঢুকে এই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি ভেঙ্গে যায়।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধান বাঁধ ভাঙনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সময় মত সংস্কার কাজ শেষ না করায় এই বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। এ জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
গাফলতির কথা অস্বীকার করে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডে নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, এলাকার লোকজনের অসহযোগিতার কারণে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয় নাই। ফলে পানির চাপে ও অবিরাম বৃষ্টিপাতের কারণে বাঁধটি ধসে গেছে।
আরো পড়ুন : পাকিস্তানের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা করছে চীনের প্রেসিডেন্ট
তিনি আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি ১৮ সেমি কমে বিপদসীমার ৭০ সে.মি. ঘাঘট নদীর পানি ১৯ সেমি কমে বিপদসীমার ৫২ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে করতোয়া ও তিস্তা নদীর পানি এখন বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গাইবান্ধা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা একেএম ইদ্রিস আলী জানান, জেলার গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, সাদুল্লাপুর, গোবিন্দগঞ্জ ও ফুলছড়ি উপজেলার ৪৪টি ইউনিয়নের ২৬৭ গ্রামের ২ লাখ ৫০ হাজার ৭৮৬মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তাদের জন্য এ পর্যন্ত ৪১০ মেট্রিক টন চাল, চার লাখ টাকার শিশুখাদ্য, সাত লাখ টাকার গোখাদ্য ও ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার শুকনা খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
ইত্তেফাক/ইউবি