গত দুই দিন ধরে মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার নিম্নাঞ্চলসহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লগুচাপ, পূর্ণিমা এবং ঝড়ো হাওয়ার প্রভাবে বুধবার বিকেল থেকে মেঘনা নদীর জোয়ারে পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৫-৬ থেকে ফুট বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে উপজেলার মেঘনা নদীর তীরবর্তী এলাকা এবং চরাঞ্চলের এলাকার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
এ সময় জোয়ারের স্রোতে সহস্রাধিক কাঁচাঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জোয়ারে প্রায় কয়েক হাজার হাঁস-মুরগী মারা যাওয়ার পাশাপাশি সহস্রাধিক পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রাস্তাঘাট ও পুল-কালভার্ট বিধ্বস্ত হয়ে অভ্যন্তরীণ কয়েকটি সড়কে বন্ধ রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
জানা গেছে, বুধবার বিকেল থেকে মেঘনার জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৫-৬ ফুট বেড়ে যায়। বেড়ীবাঁধ না থাকায় মেঘনা নদীর তীরবর্তী বালুরচর, সুজনগ্রাম, জনতা বাজার, মুন্সীরহাট, সেবাগ্রাম, চরআলগী, বড়খেরী, চরগাজী, চরগজারিয়া, চর মুজাম্মেল ও তেলিরচর এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায়। পানিতে প্লাবিত হয় মুন্সীরহাট বাংলাবাজার, জনতা বাজার ও চেয়ারম্যান বাজার। এতে করে দোকানঘরের মালামল নষ্ট হয়ে ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন। জোয়ারের পানিতে বিভিন্ন এলাকার খামারীদের হাঁস-মুরগী মারা যাওয়াসহ গবাদিপশু পানিতে ভেসে যায়।
সরেজমিনে কয়েকটি বাড়ি ঘুরে দেখা যায়, ওই সব এলাকায় রান্নার চুলা পানিতে ডুবে থাকায় লোকজন চরম খাদ্য সঙ্কটে ভুগছেন। যদিও ওইসব পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে।
উপজেলার বড়খেরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান মাকসুদ মিজান জানান, মেঘনাপাড়ের ৩৫টি বসতঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া হাজীপাড়া সড়কে একটি কালভার্ট বিধ্বস্ত হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
চরআলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন লিটন চৌধুরী জানান, তার ইউনিয়নের কয়েকশ’ কাঁচা বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং আড়াই শতাধিক পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে গেছে।
চরআব্দুল্যাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামাল উদ্দিন জানান, তার ইউনিয়নটি চারদিকে মেঘনা নদী বেষ্টিত হওয়ায় অস্বাভাবিক জোয়ারে চরগজারিয়া, চর মুজাম্মেল ও তেলিরচর এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। জোয়ারের পানিতে ওইসব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। জোয়ারের পানিতে ইউনিয়নটির চেয়ারম্যান বাজার ও জনতা বাজার প্লাবিত হয়ে অর্ধশতাধিক দোকানঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল মোমিন বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরিসহ ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের কাজ চলছে। বরাদ্দ পেলে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান করা হবে।
ইত্তেফাক/এএম