বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মামলা নিতেন ওসি প্রদীপ, রেহাই দিতেন ওসি তদন্ত

আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২০, ০০:৫১

সিনহা হত্যায় অভিযুক্ত হয়ে বরখাস্ত হওয়া কারান্তরীণ ওসি প্রদীপ পোস্টিং নিয়ে আসার পর বিগত দুই বছরে টেকনাফ থানা পুলিশ কর্তৃক সংঘটিত কর্মকাণ্ডের একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সিনেমার গল্পকেও হার মানাচ্ছে। ওসি প্রদীপের দালাল সমেত সিন্ডিকেট পুরো উপজেলায় চষে বেড়িয়ে যাকে ইচ্ছে ধরে আনতেন। দেনদরবারেসমঝোতানা হলে দিতেনক্রসফায়ার এরপর নথিভুক্ত করা হতো হত্যা, অস্ত্র মাদকের পৃথক মামলা। মামলার ফাইনাল প্রতিবেদনে বাদ দেওয়ার কথা বলে নানা আসামি থেকে টাকা আদায় করতেন ওসি (তদন্ত) এবিএম এস দোহা তার সিন্ডিকেট।

 

 

 

এসব মামলায় আসামি করা হতো বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ী, সম্পদশালী সাধারণ মানুষকে। পরবর্তীকালে এসব মামলায় নাম আসা ব্যক্তিদের ধরে এনে টাকা আদায় চলত। টাকা না পেলে ঘরে গিয়ে ভাঙচুর বা নারী সদস্যদের করা হতো হেনস্তা।

 

টেকনাফের লামার বাজার এলাকার আলোচিত ইয়াবা কারবারি ইয়াছিন আরাফাতক্রসফায়ারেনিহত হওয়ার পর টেকনাফ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এবিএম এস দোহা পরিদর্শক (অপারেশন) রাকিবুল হাসানের নেতৃত্বে একটি পুলিশি সিন্ডিকেট পুরো মামলাটি নিয়ে বাণিজ্য করেছেন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের অভিযোগ, এই মামলা থেকে চার জন আলোচিত ইয়াবা কারবারি হুন্ডি ব্যবসায়ীকে বাদ দিয়ে ১৮ জনের নামে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। সূত্র মতে, ‘বিশালঅঙ্কের টাকার বিনিময়ে টেকনাফের কুলাল পাড়ার কাদেরের ছেলে সাইফুল (২৪), টেকনাফের শীলবুনিয়া পাড়ার সোলেমানের ছেলে শফিক (৪১), চট্টগ্রামের সাতকানিয়া এলাকার মো. ওসমান (৪০) বার্মাইয়া সৈয়দ করিমকে (৫৫) মামলার চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়।

 

থানা সূত্র জানিয়েছেন, টেকনাফের লামার বাজার এলাকার ইয়াবা কারবারি ইয়াছিন আরাফাতকে ধরা হয় ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ। পরদিন ১৯ মার্চ ইয়াবা কারবারি পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। ঘটনায় পুলিশ ২২ জনকে আসামি করে মামলা করে। মামলার বাদী ছিলেন উপপরিদর্শক (এসআই) বোরহান। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) রাকিবুল হাসান। আর পুরো মামলাটি দেখভাল করেছেন পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এবিএম এস দোহা। সংশ্লিষ্টদের মতে, চার্জশিটে নাম বাদ দেওয়া চার জনের মধ্যে মো. ওসমান শীর্ষ হুন্ডি ব্যবসায়ী এবং অন্য তিন জন তালিকাভুক্ত আলোচিত ইয়াবা কারবারি।

 

অভিযোগ উঠেছে, টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে সাময়িক বহিষ্কার হওয়ার পর থানার বর্তমান পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এবিএম এস দোহা, পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) রাকিবুল হাসান, উপপরিদর্শক (এসআই) রাসেল, উপপরিদর্শক (এসআই) সাব্বিরের নেতৃত্বে একটি পুলিশি সিন্ডিকেট টেকনাফ থানার কর্তৃত্ব নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছেন। তাদের এই সিন্ডিকেটে আরো রয়েছেন উপপরিদর্শক (এসআই) মশিউর রহমান, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) নাজিম উদ্দিন, কনস্টেবল আবদুল্লাহ কনস্টেবল রুমান দাশ। এদের মধ্যে এসআই সাব্বির নিজেকে গোপালগঞ্জের পরিচয় দিয়ে কর্তৃত্ব করার চেষ্টা করছেন। আর কনস্টেবল আবদুল্লাহ হলেন পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এবিএম এস দোহার পোষ্য পুত্রের মতো। ইয়াবা কারবারিদের কাছ থেকে জব্দ করা মোটরসাইকেলের যেটি ইচ্ছা সেটিই ব্যবহার করেন।

 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে টেকনাফ থানার ওসি (তদন্ত) এবিএম এস দোহার মুঠোফোনে যোগাযোগে করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। টেকনাফ থানার নবাগত ওসি মো. আবুল ফয়সল বলেন, আমি সবেমাত্র এসেছি, তাই কিছুই জানি না। এসব বিষয়সহ সবকিছু খতিয়ে দেখা হবে। থানা চলবে আইনের নিয়মে।

 

ইত্তেফাক/ইউবি