শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বগুড়ায় ভুয়া চিকিৎসককে ৩ মাসের কারাদণ্ড

আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:৫৪

বগুড়ায় মো.তানভীর হাসান নামে এক ভুয়া চিকিৎসককে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

রবিবার রাত আটটায় শহরের জামিল নগর এলাকায় ওই অভিযান পরিচালনা করা হয়। ঘণ্টাব্যাপী এই অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারুফ আফজাল রাজন। এ সময় গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা,বগুড়া সিভিল সার্জন অফিসের প্রতিনিধি এবং র‌্যাবের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বগুড়া শহরের জামিলনগরের তাসনিম ফার্মেসি নামের একটি ওষুধের দোকান ঘেঁষে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে চেম্বার খুলে দিনরাতে রোগী দেখতেন মো. তানভির হাসান নামের এক চিকিৎসক। চেম্বারের সামনে টাঙানো সাইনবোর্ড ও রোগীর ব্যবস্থাপত্রে তিনি এমবিবিএস ছাড়াও এফসিপিএস (মেডিসিন) ডিগ্রি ব্যবহার করতেন। ব্যবস্থাপত্রে চিকিৎসকদের সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নিবন্ধিত চিকিৎসক এবং বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক চিকিৎসক বলেও উল্লেখ করেছেন। শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী রোগীই তিনি দেখতেন। সর্দি–জ্বর–কাশি থেকে শুরু করে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ছাড়াও সব ধরনের রোগী তিনি দেখতেন। নিজেকে পরিচয় দিতেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। তবে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে যাওয়ার পর ফাঁস হলো তাঁর সব ডিগ্রিই ভুয়া। এত দিন ধরে নিজেকে চিকিৎসক দাবি করে রোগী দেখে এলেও তিনি আসলে ভুয়া চিকিৎসক।

অভিযানে ভুয়া চিকিৎসক প্রমাণিত হওয়ায় মো. তানভির হাসানকে তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় ওই কথিত চিকিৎসকের চেম্বার। দণ্ডপ্রাপ্ত চিকিৎসক আদালতের কাছে নিজেকে রাজধানীর মিরপুর এলাকার বাসিন্দা পরিচয় দেন। বগুড়ায় তাঁর শ্বশুরবাড়ি বলেও জানান।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, কথিত ওই চিকিৎসক নিজেকে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বলে দাবি করে দীর্ঘদিন ধরে রোগী দেখছিলেন। কখনো কখনো তিনি নিজেকে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞও দাবি করছিলেন। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি প্রথমে চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) বগুড়া শাখায় অভিযোগ করে ব্যর্থ হন। পরে বিষয়টি রাষ্ট্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার নজরে আসে। ওই গোয়েন্দা সংস্থাটি দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রবিবার রাত আটটার দিকে কথিত চিকিৎসক তানভীর হাসানের চেম্বারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়।

আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারুফ আফজাল রাজন বলেন, অভিযানে গিয়ে দেখা যায়, ওই ব্যক্তি চেম্বারে রোগী দেখছিলেন। তাঁর দেওয়া ব্যবস্থাপত্রে এমবিবিএস, এফসিপিএস ডিগ্রিধারী ছাড়াও বিএমডিসি নিবন্ধিত শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক চিকিৎসক উল্লেখ ছিল। তাঁর কাছে এসব সনদ দেখতে চাইলে তিনি কোনো সনদ দেখাতে পারেননি। একপর্যায়ে স্বীকার করেন, তিনি ভুয়া চিকিৎসক। এমবিবিএস বা এফসিপিএস ডিগ্রি তাঁর নেই। বিএমডিসির কোনো নিবন্ধন নম্বরও নেই। অপরাধ স্বীকার করে নেওয়ায় তাঁকে মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল অ্যাক্ট ২০১০–এর ২৯ ধারায় তিন মাসের ওই কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ভুয়া ডিগ্রি ব্যবহার ও নিজেকে চিকিৎসক দাবি করে রোগী দেখা অনৈতিক, প্রতারণার শামিল ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) বগুড়া শাখার সাধারণ সম্পাদক ও শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল আলম জুয়েল।

তিনি বলেন, ‘কোনো চিকিৎসক রোগী দেখলে তাঁর ব্যবস্থাপত্রে বিএমডিসির নিবন্ধন নম্বর উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। কেউ তা না করলে দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ছাড়া তানভির হাসান নামে বগুড়ায় বিএমএর কোনো সদস্য নেই। কিছুদিন আগে ওই নামে একজন ভুয়া চিকিৎসকের ব্যাপারে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেছিলেন। খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হয়েছিলাম, তিনি ভুয়া চিকিৎসক। বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বিএমএর পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু ভুয়া চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব সিভিল সার্জন কার্যালয়, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।’

ইত্তেফাক/এমআরএম