মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সাতকানিয়ায় স্বামীর দায়ের কোপে স্ত্রীর মৃত্যু

আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৩:১৮

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় স্বামীর দা’য়ের কোপে নুসরাত শারমিন (৩০) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় ঘাতক স্বামী আবদুর রহিম (৩৮) নিজেই ৯৯৯ এ ফোন করে পুলিশের নিকট ধরা দেয়। উদ্ধার করা হয়েছে হত্যায় ব্যবহৃত দাটি।

বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার ঢেমশা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড উত্তর ঢেমশা মরহুম আবেদীনের বাড়ির পার্শ্ববর্তী প্রবাসী জসিম উদ্দীনের ভাড়া বাসায় এ ঘটনা ঘটে।

স্বামী আবদুর রহিম বান্দরবান পার্বত্য জেলা রোয়াংছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢেমশা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড সিকদার পাড়ার ডা. নুরুল আমিনের বাড়ির মৃত রমজু মিয়ার ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়,বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার গৃহবধূ নুসরাত শারমিন বাপের বাড়ি সাতকানিয়া পৌরসভার গোয়াজর পাড়া থেকে স্বামীর ভাড়া বাসা উত্তর ঢেমশা মরহুম আবেদীনের বাড়ির পার্শ্ববর্তী জসিমের ভাড়া বাসায় আসে।সাথে তার ভাইও আসে। পরে ভাই চলে গেলে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়ার এক পর্যায়ে ঘরে থাকা দা দিয়ে স্ত্রীকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে স্বামী রহিম।

এ ব্যাপারে ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী বাসার তসলিমা আক্তার নামে এক গৃহবধূ জানান, দুপুরে বাপের বাড়ি থেকে আসার পর তারা স্বামী-স্ত্রী ও দুই ছেলে মেয়ে বাসার মধ্যে তালাবদ্ধ অবস্থায় ছিল। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়ার এক পর্যায়ে ৩টি আঘাতের আওয়াজ শোনা যায়। এক পর্যায়ে বড় ছেলে কান্নাকাটি শুরু করলে তাকে নিয়ে বাসা তালাবদ্ধ করে পার্শ্ববর্তী বোনের বাড়িতে ছেলেকে রেখে আসে স্বামী। কিছুক্ষণ পর আবারও এসে দরজা খোলে ছোট মেয়েকে নিয়ে বাসা তালাবদ্ধ করে বের হয়ে বোনের বাড়ি চলে যায় স্বামী। প্রায় আধঘন্টা পর দেখি বাসার সামনে পুলিশ। পরে বাসার তালা খুলে পুলিশ গৃহবধূকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। বাসার মধ্যে দেখা যায় রক্তে ভেসে গেছে। ওই নারীর মাথার পেছনে ও গলায় দা’য়ের আঘাত দেখা গেছে।
তিনি আরো বলেন,৩ মাস আগে তিনি আমাদের ভবনে বাসা ভাড়া নেন। প্রায় সময় স্বামী রহিম তাদের বাসার ভেতর  তালাবদ্ধ করে রাখত। তিনি বাসা থেকে বের হলে স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েদের বাসার বাইরে তালাবদ্ধ করে চলে যেত।

এ ব্যাপারে আবদুর রহিমের চাচাত ভাই ফরিদুল আলম বলেন, রহিমের ৬-৭ বছর আগে বিয়ে হয়। ৪ বছর আগে সে তার স্ত্রী নিয়ে রোয়াংছড়িতে বসবাস শুরু করে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পর থেকে সে বাড়িতে চলে আসে। প্রায় সময় সে বাড়িতে না থেকে গোয়ালঘর ও বিলের মাঝেও রাত যাপন করত। মূলত সে একজন মানসিক রোগী। গত বৃহস্পতিবার তার স্ত্রী বাপের বাড়ি থেকে আসলে তাদের মধ্যে ঝগড়ার এক পর্যায়ে স্ত্রীকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে রহিম।গুরুতর আহত অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টায় চমেক হাসপাতালে রহিমের স্ত্রী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার দুই বছরের এক ছেলে ও ৩ মাসের এক মেয়ে রয়েছে। শুনেছি রহিম রোয়াংছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এছাড়া সে এক সময় ইন্সুরেন্স কোম্পানীতেও চাকরি করত।

সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)আনোয়ার হোসেন বলেন, স্বামীর দায়ের কোপের আঘাতে গুরুতর জখম স্ত্রী চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার রাতেই মারা গেছেন। এ ঘটনায় ঘাতক স্বামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আলামত হিসেবে উদ্ধার করা হয়েছে ঘটনায় ব্যবহৃত দা’টি। এ ব্যাপারে থানায় একটি হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বামী বলেন চারিত্রিক সমস্যা থাকার কারণে তাকে দা দিয়ে কোপানো হয়েছে। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদে সে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছিল।

ইত্তেফাক/এমআরএম