শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পেঁয়াজের বাজারের অস্থিরতায় রাজধানীর পাইকার সিন্ডিকেট দায়ি: ডিসি পাবনা

আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৬:২৬

দেশে পেঁয়াজ ভান্ডার বলে পরিচিত পাবনার সুজানগর, সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলায় কৃষকের ঘরে অন্তত ৭৫ হাজার টন পেঁয়াজ মজুত আছে। তবুও লাগামহীন পেঁয়াজের বাজার। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন, পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও বাজারে ঊর্ধ্বগতিতে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। তবে জেলা প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, বাজারের অস্থিরতার জন্য রাজধানীর পাইকার সিন্ডিকেট দায়ি। তাদের নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে হবে। 

পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ ইত্তেফাককে জানান, পেঁয়াজের দামের অংক ঢাকার কারওয়ান বাজার থেকে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট প্রতিদিন পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দেয়। যার প্রভাবে দাম বেড়ে যায় পাবনার হাটে বাজারে। ফলে উৎপাদক বা সরবরাহকারী পর্যায়ে অভিযান চালিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে ঢাকার পাইকার সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে পেঁয়াজ বাজারও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

জেলা প্রশাসক আরও জানান, পাবনায় চলতি মৌসুমে সাড়ে ৫ লাখ টন পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ৬ লক্ষ ৪৫ হাজার ৫৮০ টন। বর্তমানে জেলায় ৭৫ হাজার টন পেঁয়াজ মজুদ আছে। পেঁয়াজের তেমন কোনো সঙ্কট নেই। গুজবের কারণে মানুষ অতিরিক্ত মাত্রায় পেঁয়াজ কেনায় বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।

পেঁয়াজ নিয়ে স্থানীয় কৃষি অফিস যা বলছে

কৃষি কার্যালয় সূত্রগুলো জানায়, সুজানগর হলো দেশের সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদনকারী উপজেলা। এর পরেই সাঁথিয়ার অবস্থান। সুজানগরে এবার ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে ২ লাখ ১৩ হাজার টন। সাঁথিয়ায় ১৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়ে এক লাখ ৯৫ হাজার টন।  আর বেড়ায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হয়ে ৫৬ হাজার ২০০ টন পেঁয়াজ। অন্য বছরগুলোতে ব্যবসায়ীরা প্রচুর পেঁয়াজ মজুত করলেও এবার কৃষকরাই মজুত বেশি রেখেছেন। 

তিন উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের মতে, অন্য বছরের তুলনায় এবার কৃষকের ঘরে মজুত পেঁয়াজের পরিমাণ অনেক বেশি। চলতি বছরের পেঁয়াজ ওঠার মৌসুমের (মার্চ-এপ্রিল) পর পাঁচ মাস পেরিয়ে গেছে। ইতিমধ্যে কৃষকের ঘরের পেঁয়াজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এখনো তিন উপজেলায় ৭৫ হাজার টনের বেশি পেঁয়াজ কৃষকের ঘরে মজুত রয়েছে।  

সরেজমিন পাবনার বাজারগুলোতে পেঁয়াজের অবস্থা

গত বুধবার পাবনার সুজানগর বাজার পেঁয়াজ হাটে সকাল থেকেই ছিল পাইকার ও ক্রেতাদের ভিড়। দেশের অন্যতম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এই উপজেলায় গত রবিবারের হাটে প্রতিমণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ১৮শ’ টাকায়। মাত্র দুদিনের ব্যবধানে সেখানেই প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে বুধবার পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি মণ ৩২শ’ থেকে ৩৫শ’ টাকায়। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় এমন অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। পেঁয়াজ ওঠার মৌসুমে প্রতিমণ পেঁয়াজের দাম ছিল ১৭শ’ থেকে ১৮শ’ টাকা। গত রবিবার সুজানগর বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল মণ প্রতি ২৮শ’ থেকে তিন হাজার টাকা। খুচরা ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি।

স্থানীয় ক্রেতারা যা বললেন

ভারতে আটকে থাকা পেঁয়াজ ছাড় হওয়ার খবরে দাম কিছুটা কমলেও তা সহনীয় নয় বলছেন ক্রেতারা। রবিবার সকালে পাবনা শহরের বড়বাজারে  গিয়ে দেখা যায় পাইকারি প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ২৬শ’ থেকে ২৮শ’ টাকা।। খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে কেজি ৭০/৭৫ টাকায়।  আগের দিন দাম ছিল প্রতিকেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা।  

পেঁয়াজের পাইকারদের বক্তব্য

স্থানীয় পাইকাররা জানান, গত মৌসুমের আকাশচুম্বী দামের কারণে এ বছর পাবনায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ায় ফলনও হয়েছে বাম্পার। উত্তোলন কালে আবহাওয়া শুষ্ক থাকা, বাতাসের আর্দ্রতা সহনীয় থাকায় কৃষক পর্যায়ে সংরক্ষিত পেঁয়াজও নষ্ট হয়নি। এরপরেও গত বুধবার খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম দাঁড়ায় কেজি প্রতি ১শ’ টাকায়। আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধিতে চাষীরা খুশি হলেও, ক্ষুব্ধ পাইকার ও ক্রেতারা।

ইত্তেফাক/এসি