বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

দেবে গেছে মৌলভীবাজার-বড়লেখা আঞ্চলিক সড়ক, ঝুঁকি নিয়ে চলছে যান

আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০২:০৯

মৌলভীবাজার-বড়লেখা আঞ্চলিক সড়কের হাতলিঘাট নামক স্থানে সড়ক দেবে গেছে। ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। গত কয়েকমাস ধরে ওই সড়ক এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের দেবে যাওয়া অংশে প্রায়ই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ছোট-বড়ো যানবাহন উল্টে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে সড়কটির দেবে যাওয়া অংশ মেরামতের জন্য সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীকে চিঠি দিয়েছেন বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম আল ইমরান। এর আগে তিনি দেবে যাওয়া অংশটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত কয়েক দফা বন্যার পানিতে মৌলভীবাজার-বড়লেখা আঞ্চলিক সড়কের সফরপুর, হাতলিঘাট, কুইয়াছড়ি এলাকা বিধ্বস্ত হয়। এছাড়া এই সড়কের চান্দগ্রাম পর্যন্ত বিভিন্ন অংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর ২০১৮ সালের শেষ দিকে সড়কটি মেরামতের কাজ শুরু হয়। কাজটি পায় ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স। তার পক্ষে হাতলিঘাট এলাকার কাজটি সম্পন্ন করেন কুলাউড়া উপজেলার একজন ঠিকাদার। সংস্কার কাজ সম্পন্নের দেড় বছরের মাথায় সড়কের জুড়ী ও দক্ষিণভাগের মধ্যবর্তী হাতলিঘাট নামক স্থানে গত কয়েকমাস আগে প্রায় ২৫ মিটার জায়গার অর্ধেক দেবে যায়। এরপর প্রতিদিনই দেবে যাওয়ার পরিমাণ বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে দেবে যাওয়া সড়কের অংশটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়েন এ সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যানবান চালক ও যাত্রীরা। দূরপাল্লার যানবাহনগুলো হঠাৎ সড়ক নিচু দেখে ব্রেক করতে গিয়ে দুর্ঘটনার মুখে পড়ছে। গত কয়েকমাসে দেবে যাওয়া অংশের ওপর দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে ছোট-বড় অনেক যানবাহন উল্টেছে। এতে গাড়ির চালক ও যাত্রীদের আহত হওয়ারও ঘটনা ঘটেছে। 

মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, দেবে যাওয়া অংশটিতে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। পণ্যবাহী বড় ট্রাক ও যাত্রীবোঝাই দূরপাল্লার বাসের গতি কমিয়ে চালকরা চালাচ্ছেন। গাড়ি উল্টে যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে।
 
ট্রাক চালক বিলাল হোসেন বলেন, ‘রাস্তাটির কারণে অনেক কষ্ট হচ্ছে। গাড়ির এক সাইট নামানোর পরে নিয়ন্ত্রণ করা কষ্ট হয়ে যায়। লোড গাড়ি (মাল বোঝাই) নিয়ন্ত্রণ করা কত কষ্ট আমরা বুঝি। প্রায় সিএনজি উল্টে যায়। দ্রুত এর সমাধান দরকার।’

সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক হাফিজ উদ্দিন বলেন, কয়েক মাস ধরে রাস্তা দেবেছে। হালকা যানবাহন উল্টে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। খুব ঝুঁকি নিয়ে আমরা গাড়ি চালাই। দিন দিন রাস্তার দেবে যাওয়া বাড়ছে। রাস্তাটি মরণ ফাঁদে পরিণত হলেও মেরামতের দিকে যেন কারো নজর নেই। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে যে কোনো সময় বড়ধরণের দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে।’ 

আলাপকালে বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামীম আল ইমরান মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) বলেন, ‘মৌলভীবাজার-বড়লেখা আ লিক সড়কের হাতলিঘাট এলাকায় সড়কের কিছু অংশ আকস্মিক নিচের দিকে দেবে গেছে। এতে বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশংকা দেখা দিয়েছে। জায়গাটি জরুরী ভিত্তিতে মেরামত প্রয়োজন। সরেজমিনে দেবে যাওয়া জায়গাটি দেখে জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে জানিয়েছি এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীকে চিঠি দিয়েছি।’

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জিয়া উদ্দিন মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টায় মুঠোফোনে বলেন, ‘সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের কর্মকর্তাদের সমন্নয়ে একটি টিম সরেজমিনে দেবে যাওয়া জায়গাটা পরিদর্শন করে এসেছে। এই জায়গাটার অনেক নিচের মাটিতে বড় ধরণের সমস্যা আছে। ধারণা করা হচ্ছে এই জন্য সড়কের এ অংশটা দেবে গেছে। এ বিষয়ে ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। ঢাকা থেকে ডিজাইন টিম এসে সমস্যাটা চিহ্নিত করলে এর স্থায়ী সমাধাণ করা যাবে। যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করেছে তাদের সাথে কথা হয়েছে। দেবে যাওয়া এলাকায় আপতকালীন জরুরী মেরামতের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এই এলাকায় প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করতে পারছে না। দুই একদিনের মধ্যেই তারা সড়কের দেবে যাওয়া অংশে জরুরী মেরামতের কাজ শুরু করবে।’

ইত্তেফাক/ইউবি