শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মধুপুরে ফল বাগান বিনাশ ও বনায়ন নিয়ে বিবাদে সুরাহা, গারোরা খুশি ক্ষুব্ধ বাঙালিরা

আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২২:১৪

টাঙ্গাইলের মধুপুরে ফল বাগান বিনাশ করে বনায়ন ও কাজু বাদামের ট্রায়াল প্লট নিয়ে সৃষ্ট বিবাদ মীমাংসা হয়েছে। গত বৃহষ্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দোখলা বাংলোতে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত এক বৈঠকে সৃষ্ট জটিলতার সুরাহা হয়। এতে গারোরা খুশি হলেও বাঙালিরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

শোলাকুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আখতার হোসেন জানান, বনায়ন এবং কাজু বাদামের নমুনা প্লটের জন্য বনকর্মীরা সম্প্রতি পেগামারি গ্রামের গারো রমণী বাসন্তী রেমার ৪০ শতাংশ কলা বাগান এবং আমলিতলা গ্রামের উমর আলীসহ ছয়জন বাঙালির পাঁচ একর ফল ও মশলা বিনাশ করেন। এর প্রতিবাদে বাঙালি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী গারোরা যৌথভাবে আন্দোলন শুরু করে। এমতাবস্থায় কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের নির্দেশে বিষয়টি সুরাহার জন্য গত বৃহস্পতিবার দোখলা বাংলোতে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। 

টাঙ্গাইল বিভাগীয় বনকর্মকর্তা জহিরুল হকের সভাপতিত্বে বৈঠকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) জামিরুল ইসলাম, মধুপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফা জহুরা, মধুপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরোয়ার আলম খান আবু, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান যষ্ঠিনা নকরেক, মধুপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার কামরান হোসেন, জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক, ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি উইলিয়াম দাজেল, গারো নেতা অজয় এ মৃ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইয়াকুব আলীসহ গারো নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 

গারো নেতা ইউজিন নকরেক জানান, বৈঠকে স্থানীয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত দেন, জমি বনবিভাগের হলেও বংশগতভাবে ভোগদখল করায় বাসন্তি সারাজীবন এটি ভোগদখল করবেন। ফল বাগান বিনাশের জন্য তাকে ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ এবং উপজেলা প্রশাসন প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের কোটা থেকে বাসন্তিকে একটি বাড়ি করে দেবেন। আর বনবিভাগ কখনো আদিবাসীদের দখলীয় জমিতে বনায়ন করবেন না। 

অরনেখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম জানান, বৈঠকে বাসন্তি রেমার বিষয়টি ফয়সালা হলেও দরিদ্র ছয় বাঙালির ফল বাগান বিনাশ এবং তাদের অধিকার বা ক্ষতিপূরণের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত  হয়নি। বৈঠকে তিনি কথাটা উত্থাপন করলেও কোনো সদুত্তর পাননি।  বনবিভাগ সেখানে কাজু বাদাম ট্রায়াল প্লটের পরিবর্তে বনায়ন করবেন বলে জানা গেছে।  ফলে একই যাত্রায় দুই ফল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাসন্তি রেমা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর হওয়ায় তিনি বনবিভাগের জমি সারা জীবন ভোগদখল করতে পারবেন। আর বাঙালিরা জমি ভোগ তো দূরের কথা কোনো ক্ষতিপূরণও পাবেন না; এটি বৈষম্যমূলক। এ সিদ্ধান্তে এলাকার বাঙালিরা ক্ষুব্ধ। 

আমলিতলা গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক উমর আলী জানান, আমরা ভূমিহীন। সাত দশক ধরে ওই ফল বাগানের জমি ভোগদখল করে আসছি।  গতকাল বৈঠকে দাবিদাওয়া তুলে ধরার জন্য আমরা বাংলোতে গেলে বনবিভাগ ও পুলিশ সেখানে যেতে বাধা দেয়। বৈঠক শেষে এ জন্য আমরা বাংলোর সামনে বিক্ষোভ করেছি। 

শোলাকুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আখতার হোসেন জানান, একই সমস্যা নিয়ে গারো ও বাঙালিরা যৌথভাবে আন্দোলন করেছেন। কিন্তু সমাধানে বৈষম্য করা হয়েছে।  

দোখলা রেঞ্জ অফিসার আব্দুল আহাদ জানান, জমি বনবিভাগের হলেও স্থানীয় প্রশাসনের সিদ্ধান্তক্রমে বাসন্তি রেমার জমিতে বনবিভাগ আর গাছ লাগাতে যাবেনা। অলিখিতভাবে তিনি সারাজীবন ভোগদখল করে খাবেন। তবে আমলিতলী গ্রামে বাঙালিদের ফল বাগান বিনাশ করে যে পাঁচ একর পুনদখল করা হয়েছে সেখানে নতুন বনায়ন হবে। সেক্ষেত্রে বাঙালিরা কোনো ক্ষতিপূরণ পাবেনা। জমিতেও যেতে পারবেননা। 

মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট ইয়াকুব আলী জানান, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বিষয়টি দ্রুত মীমাংসার নির্দেশ দেন। সেই আলোকে বিষয়টির ফয়সালা করা হয়। তবে ভূমি নিয়ে বনবিভাগের সঙ্গে গারোদের যে চিরায়ত বিরোধ সেটির ফয়সালা জরুরি। তবে মীমাংসায় বাঙালিরা উপেক্ষিত হয়েছেন। একই চালে দুই ধরনের রান্না হয়েছে। 

মধুপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফা জহুরা জানান, বৈঠকে বাঙালিদের ফলবাগান বিনাশ এবং তাদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি নিয়ে কেউ আলোচনায় আনেননি। এজন্য সেটির সমাধানও হয়নি। বনবিভাগ নিজ উদ্যোগে হয়তো সেটি সমাধান করবেন।  

সহকারী বন সংরক্ষক জামাল হোসেন তালুকদার জানান, বৈঠকের সিদ্ধান্তক্রমে গারো জবরদখলকারীদের উচ্ছেদ করে মধুপুরে আর কোনো বনায়ন হবেনা। তবে বাঙালি সেটেলারদের উচ্ছেদ বন্ধ করা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সেটি অব্যাহত থাকবে। 

টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসটি) জামিলুর রহমান জানান, বিষয়টি স্পর্শকাতর। এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে বনবভিাগকে জবরদখলী জমিতে বনায়ন করতে বলা হয়েছে।  

ইত্তেফাক/এসি