বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শ্রীপুরে জিম্মি ব্যবসায়ীদের উদ্ধার করতে গিয়ে পুলিশের অস্ত্র গুলি ছিনতাই

আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৮:৫১

উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে কসাইপট্টি এলাকায় শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে তিন ব্যবসায়ীকে জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করতে গিয়ে হামলায় দুই পুলিশ ও এক আনসার সদস্যসহ ছয়জন আহত হয়েছেন। এসময় পুলিশের একটি শর্টগান ও ৮ রাউন্ডগুলি ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করেছে পুলিশ। সংবাদ পেয়ে রাতেই শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খোন্দকার ইমাম হাসান নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ৬ হামলাকারীকে আটক এবং ছিনিয়ে নেওয়া অস্ত্র-গুলি উদ্ধার করে। বাকিরা রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যায়।

আটক ব্যক্তিরা হলেন, শেরপুর জেলার কালিগঞ্জের দমদমা গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের মেয়ে রুশমি আরা, শ্রীপুর উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের নাজমুল হোসেন রকির স্ত্রী মনিশা মনি, একই উপজেলার দিঘিপাড়া নয়নপুর গ্রামের আফসার উদ্দিনের ছেলে ফরহাদ, নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার লাফুয়া গ্রামের জাফর মোল্ল্যার ছেলে তাজুল ইসলাম মোল্ল্যা ও ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার হাজারীগঞ্জ গ্রামের সোলাইমানের ছেলে আব্দুর রহমান। 

জিম্মি করে মারধরের ঘটনায় আহতরা হলেন, কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার জাফরাবাদ গ্রামের ইদ্রিস মিয়ার ছেলে আবুল হোসেন রনি, একই উপজেলার নবিয়াত গ্রামের আয়াত আলীর ছেলে রনি, জেলার চান্দিনা উপজেলার কাতকী গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে মাসুম, কুমিল্লা জেলার হোমনা থানার মঙ্গলকান্দি গ্রামের শাহ্ আলমের ছেলে ফয়সাল, লক্ষীপুর জেলার রায়পুরা উপজেলার কেওড়া ডুবি গ্রামের নিখিল বেপারীর ছেলে ওমর বেপারী।

হামলার শিকার কুমিল্লার দেবীদ্বার থানার নবিয়াদার গ্রামের আবুল হোসেন রনি জানান, তিনি ঢাকার পুরানা পল্টন এলাকার রাখা ইন্টারন্যাশনালে মার্কেটিং অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। লাইসেন্সধারী এ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রবাসে বৈধভাবে লোক পাঠানো হয়। এবছরের ফেব্রুয়ারিতে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি নোয়াগাঁও এলাকার ইসমাইল হোসেন ও শাহাদত হোসেন নামের দুইজনকে দুবাই পাঠানো জন্য তাদের কাছ থেকে দুই লাখ ষাট হাজার টাকা নেওয়া হয়। কাগজপত্র প্রক্রিয়া করতে গিয়ে করোনাকালীন লকডাউনে তাদের কার্যক্রম আটকে যায়। এতে ওই দুইজনকে বিদেশ পাঠানো সম্ভব হয়নি। 

এমতাবস্থায় ইসমাইল হোসেন তাদের জমা দেয়া টাকা ফেরত চাইলে ৫০ হাজার টাকা বিকাশ করে ফেরতও পাঠানো হয়। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ফোন করে ইসমাইল আবুল হোসেন রনিকে আরও লোকজনকে বিদেশ পাঠানোর জন্য আলোচনা করার প্রস্তাব ও দাওয়াত দেয়। বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তিনি (আবুল হোসেন রনি) ও তার অপর বন্ধু মো. ফয়সাল আহমেদকে নিয়ে শ্রীপুরের নোয়াগাঁও ইসমাইলের বাসায় গেলে ঘরের মধ্যে আটকে নানা ভয়-ভীতি দেখিয়ে একটি তিনশত টাকা মূল্যের সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয় এবং সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন ছিনিয়ে যায়। পরে ওই স্ট্যাম্পে ৫ লাখ টাকা পায় উল্লেখ করে ওই দিনই টাকা পরিশোধ করার জন্য তাদের মারধোর করে। 

বিষয়টি জানিয়ে সহকর্মী ব্যবসায়ী মো. ফয়সালকে খবর দিলে পরদিন শুক্রবার রাত ৮টায় ফয়সাল, তার বন্ধু ওমর বেপারী, মো. কালাম ও মাসুমকে সঙ্গে নিয়ে ইসমাইলের বাড়িতে গেলে তাদেরও আটক করে বেধড়ক মারপিট করে। পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে আটককৃতদের একজন জাতীয় সেবা নাম্বার ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে বিষয়টি জানায়।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খোন্দকার ইমাম হাসান জানান, খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে শ্রীপুর থানার টহল পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. রফিকুল ইসলাম, কনস্টেবল খোরশেদ আলম ও এক আনসার সদস্য ইসমাইলের বাড়িতে যান। এসময় পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে, ইসমাইল ও তার ৩০/৪০ লোক অতর্কিতে পুলিশের ওপরও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় এবং পুলিশের সঙ্গে থাকা শর্টগান ও পিস্তলের ৮ রাউন্ডগুলিভর্তি ম্যাগজিন ছিনিয়ে নেয়। সংবাদ পেয়ে রাতেই তার নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ছয় হামলাকারীকে আটক এবং ছিনিয়ে নেওয়া অস্ত্র-গুলি উদ্ধার করে। বাকিরা রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যায়। আহত পুলিশ, আনসার ও ব্যবসায়ীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে শ্রীপুর থানায় পুলিশ ও ব্যবসায়ীরা বাদি হয়ে পৃথক দুটি মামলা করেছে। মামলায় ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। 

ইত্তেফাক/এসি