বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কুষ্টিয়ায় চুক্তি লংঘন করা ২৬১টি চালকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে

আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:০১

কুষ্টিয়ায় বোরো সংগ্রহ অভিযানে চাল সরবরাহে চুক্তি লংঘনের দায়ে ৩টি অটো ও ২৫৮টি হাসকিংসহ মোট ২৬১টি চালকল তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। চাল সরবরাহ না করে চুক্তি উপেক্ষা করায় শাস্তিমুলক ব্যবস্থা হিসাবে জামানত পুরো বাজেয়াপ্ত, কালো তালিকাভুক্তকরণসহ আগামী দুই মৌসুম ওই মিলগুলোকে চুক্তির বাইরে রাখার উদ্যোগ  গ্রহণ করা  হয়েছে। 

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবারের বোরো মৌসুমে চাল সরবরাহে কুষ্টিয়া জেলায় ২৯টি অটো ও হাসকিংসহ সবমিলিয়ে ৫৩৫টি মিল স্থানীয় খাদ্য বিভাগের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। এদের মধ্যে চুক্তিবদ্ধ ২৬৫টি চালকল সমুদয় চাল সরবরাহ করেছে। ২৫৮টি হাসকিং ও ৩টি অটো রাইস মিল মালিক একবারেই চাল সরবরাহ না করে  চুক্তি লংঘন করেছে। তবে ১২টি মিল হাসকিং মিল মালিক আংশিক চাল সরবরাহ করেছে। যারা চুক্তি একবারে লংঘন করেছে তাদের লাইসেন্স বাতিল হতে পারে।

এদিকে দেশব্যাপী চাল সংগ্রহ ধীর গতির কারণে ৩১ আগস্ট থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বাড়ানো হলেও কুষ্টিয়ায় সফল হয়নি সংগ্রহ অভিযান। সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ অধিকাংশ মিলার চাল সরবরাহ থেকে বিরত থাকায় এবারের বোরো মৌসুমে সংগ্রহ অভিযান মুখ থুবড়ে পড়েছে।
এবারের বোরো মৌসুমে সরকার নির্ধারিত কেজিপ্রতি ৩৬ টাকা দর নির্ধারণ করা হয়। জেলায় চাল সংগ্রহের টার্গেট ছিল ৩৪ হাজার ২শ মেট্রিক টন। সর্বনিন্ম ৫ মেট্রিক টন থেকে সর্বোচ্চ ৯ মেট্রিন টন চাল সরবরাহে মিল মালিকগন চুক্তিবদ্ধ হন। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের সর্বশেষ হিসাব মতে, সংগ্রহ হয়েছে ২২ হাজার মেট্রিক টন। টার্গেটের তুলনায় যা ১২ হাজার মেট্রিক টন কম। সংগ্রহ হয়েছে  টার্গেটের ৬৫ ভাগ সিদ্ধচাল এবং আতপ চাল ৫৯ ভাগ অর্জিত হয়েছে। ধানের ক্রয় মূল্যসহ চাল উৎপাদন খরচ সরকার নির্ধারিত কেজি প্রতি চালের দর থেকে ৪/৫ টাকা বেশী পড়ে যাওয়ায়  মিলাররা সংগ্রহ অভিযান শুরু থেকেই ক্ষতিতে চাল সরবরাহে অনীহা দেখিয়ে আসছিল। খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় থেকে চুক্তিবদ্ধ মিলরাদের সরবরাহে বার বার তাগিদ দিয়েও সংগ্রহ অভিযানে সফল হতে তারা ব্যর্থ হন। এছাড়া খাদ্য মন্ত্রণালয় ঘোষিত প্রজ্ঞাপনে সংগ্রহ অভিযানের সময়সীমা ৩১ আগষ্ট থেকে আরো ১৫ দিন বর্ধিত করা হলেও লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। তবে লাভ-ক্ষতির হিসাব না কষে চুক্তির দায়বদ্ধতা থেকে ছোট-বড় চাল কলের মালিকদের অধিকাংশই গুদামে চাল সরবরাহ করেন। তবে ব্যাংকের দায়-দেনাসহ ক্ষতিগ্রস্ত চালকল মালিকরা চুক্তি সত্বেও ক্ষতিতে চাল সরবরাহ করেন নি  বলে খোঁজ নিয়ে  জানা গেছে।

জেলা খাদ্য বিভাগ চুক্তি লংঘনকারী মিল মালিকদের তালিকা তৈরী করেছে। এদের চুক্তিবদ্ধদের অনুকুলে ৩৬ টাকা কেজি হিসাবে বরাদ্ধকৃত চালের মোট মূল্যের উপর ২% হিসাবে জামানতের টাকা বাতিলসহ আগামী দুই মৌসুম চাল সরবরাহে চুক্তির বাইরে রাখা হতে পারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তাহসিনুল হক জানান।

খাজানগর মোকামের দেশ এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রিজের সত্বাধিকারী আব্দুল খালেক জানান, লাভ-ক্ষতি উভয় দিক মেনেই ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। চাল সরবরাহে এবার লোকসান মেনেই চুক্তির দায়বদ্ধতা থেকে বরাদ্ধকৃত পুরো চাল তিনি সরবরাহ করেন।

অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতি কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন জানান, এবার ধানের বাজার দর বাড়তি। এছাড়া বোরো মৌসুমে মোটা ধানের উৎপাদনও কম। ফলে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে উৎপাদিত চালের দর কেজিপ্রতি ৩/৪ টাকা বেশি। কিন্তু তা সত্বেও চুক্তিবদ্ধ চালকল অধিকাংশ মালিকরা ক্ষতিতে সরকারকে চাল সরবরাহ করেন।

এবিষয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তাহসিনুল হক জানান, চুক্তি যারা লংঘনকারীদের তালিকা করা হয়েছে। এদের জামানত বাতিলসহ সরকারী বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা

ইত্তেফাক/এমআরএম