বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ঠাকুরগাঁওয়ের গুদামে একমুঠো চালও দেননি ৮৫৭ মিল মালিক

আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৫:৩৫

চুক্তি অনুযায়ী ঠাকুরগাঁও জেলার ৯৯৩ জন চালকল মালিক সরকারি গুদামে চাল সরবরাহ করেননি। এদের মধ্যে আংশিক সরবরাহ করেছে ১৩৬ জন। অবশিষ্ট ৮৫৭ জন গুদামগুলোতে কোনো চালই সরবরাহ করেননি। মিল মালিকদের চাল দেওয়ার সময় বাড়িয়ে দিয়েও বোরো ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি ঠাকুরগাঁও খাদ্য বিভাগ। চালের বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় চেপে গেছেন মিল মালিকরা। এদিকে সাধারণ জনগণের অভিযোগ, মিল মালিকদের কারসাজিতেই বাজারে বেড়েছে চালের মূল্য।

চালকল মালিকরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারে চালের দাম বেশি হওয়ায় তারা গুদামে চাল সরবরাহ করতে পারেননি। এদিকে খাদ্য বিভাগ জানিয়েছে, যারা চুক্তি অনুযায়ী চাল সরবরাহ করেননি তাদের বিরুদ্ধে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

ঠাকুরগাঁও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, এবার বোরো মৌসুমে ২৬ টাকা দরে জেলায় ১১ হাজার ৩০৯ মেট্রিক টন ধান ও ৩৬ টাকা দরে ৩২ হাজার ৮৬৭ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গুদামে ২৬ এপ্রিল ধান ও ৭ মে চাল সংগ্রহ শুরু হয় । চাল সংগ্রহের আগে গত মে মাসে চাল সরবরাহের জন্য চালকলের এক হাজার ৬৫৯ জন মালিকের সঙ্গে চুক্তি করে খাদ্য বিভাগ। 

চলতি মৌসুমে খাদ্য বিভাগের ধান-চাল সংগ্রহের শেষ দিন ছিল গত ৩১ আগস্ট। সেই দিন পর্যন্ত জেলার ১৩টি সরকারি খাদ্যগুদামে ধান সংগ্রহ হয় দুই হাজার ৮৩ মেট্রিক টন, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। আর চালকল মালিকেরা সরবরাহ করেন ১৫ হাজার ৩৪৫ মেট্রিক টন চাল, যা লক্ষ্যমাত্রার ৪৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

প্রয়োজনীয় ধান-চাল সংগ্রহ না হওয়ায় ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারি গুদামে ধান-চাল সংগ্রহের মেয়াদ বাড়ানো হয়। এ সময়ের মধ্যে দুই হাজার ১৩২ দশমিক ৮০০ মেট্রিক টন ধান ও ১৭ হাজার ২২২ দশমিক ৭১ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ হয়, যা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার ১৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। আর চাল লক্ষ্যমাত্রার ৫২ দশমিক ৭২ শতাংশ। 

জেলার এক হাজার ৬৫৯টি চুক্তিবদ্ধ চালকলের মধ্যে ৬৬৬টির মালিক চুক্তি অনুযায়ী গুদামে চাল সরবরাহ করেছেন। চুক্তি অনুয়ায়ী চাল দেননি চালকলের ৯৯৩ জন মালিক। এদের মধ্যে আংশিক চাল সরবরাহ করেছেন চালকলের ১৩৬ জন মালিক এবং কোনো চাল দেননি ৮৫৭ জন।
‘চাউল সংগ্রহ নিয়ন্ত্রণ আদেশ ২০০৮’-এ বলা হয়েছে, ‘এই আদেশের অধীন লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি তাহাকে প্রদত্ত লাইসেন্সের শর্ত বা এই আদেশের কোনো বিধান লঙ্ঘন করিলে সরকার উক্ত ব্যক্তির লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল করিতে পারিবে।’

চুক্তিবদ্ধ কয়েকজন চালকলমালিক বলেন, এবার মৌসুমের শুরুতেই বাজারে ধানের দাম চড়া ছিল। এ অবস্থায় চালকল মালিকেরা ধান সংগ্রহ করতে পারেননি। পরে বাজারে ধানের দাম আরও বাড়তে থাকে। পরে এর প্রভাব চালের বাজারে পড়ে। ধান ও চালের বাজারদর কমলে, গুদামে চাল সরবরাহ করবেন—এমন আশায় থাকা অনেক ব্যবসায়ী গুদামে আর চাল দিতে পারেননি। বর্তমানে বাজারে মোটা জাতের হাইব্রিড ধান প্রতি কেজি ২২ থেকে ২৪ টাকা, তা-ও আবার চাহিদামতো পাওয়া যাচ্ছে না। এ দামে মোটা জাতের ধান কিনে প্রতি কেজি চাল উৎপাদনে ৪০ টাকার ওপর খরচ হচ্ছে।

জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান বলেন, এবার বোরো মৌসুমের শুরু থেকেই ধানের বাজার ঊর্ধ্বগতি হওয়ায় আশানুরূপ ধান কিনতে পারেননি চালকল মালিকেরা। পাশাপাশি অস্বাভাবিক বৃষ্টিও চাল উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। এতে অনেক চালকল মালিক চুক্তি করেও গুদামে চাল সরবরাহ করতে পারেননি। প্রতিকূল আবহাওয়া ও করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার তাঁদের প্রতি নমনীয় হবে বলে তিনি আশা করেন।

এদিকে স্থানীয় খুচরা কয়েকজন ক্রেতা অভিযোগ করে বলেন, মিল মালিকরা যদি গুদামে চাল নিয়ে দিয়ে থাকেন তবে এই ধান-চালগুলো গেলো কই! এখন চালের বাজারে আগুন। হয়তো মিল মালিকদের কারসাজিতেই এমনটি ঘটেছে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনিরুল ইসলাম বলেন, ধান-চাল সংগ্রহের সময়সীমা ১৫ সেপ্টেম্বর শেষ হয়েছে। কিন্তু চালকল মালিকদের চাল সরবরাহে তাগাদা দিয়েও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়নি। জেলার যেসব মালিক চাল সরবরাহ করেননি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইত্তেফাক/এসি