খাগড়াছড়ি জেলা শহরের চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ ঘটনা নিয়ে রবিবার সকালে খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ব্রিফিং করেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন ও খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো. আব্দুল আজিজ।
খাগড়াছড়ি জেলা সদরের বলপেইয়া আদাম এলাকার এক বাড়িতে ডাকাতি ও গণধর্ষণ ঘটনার নেপথ্য উদঘাটনের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছে পুলিশ। ঘটনায় ৯ জন পেশাদার ডাকাত অংশ নেয় এবং ডাকাতি ও ধর্ষণই তাদের উদ্দেশ্যে ছিল বলে জানান খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো. আব্দুল আজিজ।
সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, ডাকাতি ও গণধর্ষণের ঘটনায় কোন সাম্প্রদায়িক উস্কানি ছিল না। একটি মহল ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। অপরাধীদের কোন পরিচয় নেই। তাদের পরিচয় তারা অপরাধী। তাদের কোন জাত নেই। পুলিশ সে বিবেচনা মাথায় রেখে খুব কম সময়ের মধ্যে ডাকাতি ও গণধর্ষণ ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করেছে।
তিনি রবিবার সকালে খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে এ সব কথা বলেন। চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন জানান, এর সঙ্গে রাজনৈতিক কোন সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে খাগড়াছড়িতে ডাকাতি ও মানসিক প্রতিবন্ধী নারীকে গণধর্ষণের অভিযোগ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত ৭ আসামি অপরাধ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে রাজি হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সুপার। তিনি সংঘটিত ঘটনাকে ন্যক্কারজনক উল্লেখ করে বলেন, ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও আসামি শনাক্ত করার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি বলেই পুলিশ অপরাধীদের চিহ্নিত করে ইতিমধ্যে ৭ জনকে গ্রেফতারে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, কোন কোন ডাকাত প্রতিবন্ধী নারীকে তিনবারও ধর্ষণ করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। অন্য আসামিদের খুব দ্রুত গ্রেফতারের অভিযান চলছে জানিয়ে বলেন, একাধিকবার ডাকাতি ও ধর্ষণের মামলায় এরা গ্রেফতার হয়েছিল। ডাকাতি ও গণধর্ষণের সাথে জড়িতরা পরস্পরের সাথে জেলখানায় পরিচয় হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো- জেলার রামগড়ের মো. আমিন ওরফে নুরুল আমিন (৪০), দারোগা পাড়ার থেকে মো. অন্তর, জেলা সদরের কুমিল্লা টিলার মো. বেলাল হোসেন (২৩), গুইমারার বড় পিলাকের মো. ইকবাল হোসেন (২১) ও মো. শাহীন মিয়া (১৯), মাটিরাঙার আদর্শ গ্রামের মো. আব্দুল হালিম (২৮) এবং মুসলিম পাড়ার আব্দুর রশীদকে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়। এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রশীদ, ডিবির ওসি তারেক আব্দুল হান্নানসহ মাটিরাঙা, রামগড় ও গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ পুলিশ সদস্যরা।
উল্লেখ্য , গত ২৩ সেপ্টেম্বর দিবাগত মধ্য রাতে ডাকাতদল জেলা সদরের বলপেইয়া আদাম এলাকার এক বাড়িতে ঢুকে ডাকাতির নামে তাণ্ডবলীলা চালায়। ৯ সদস্যের ডাকাত দল পরিবারের সদস্যদের হাত-মুখ বেঁধে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা, মোবাইল সেট নিয়ে লুট করার পাশাপাশি বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নারীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ভোররাতে প্রতিবেশীরা চেঁচামেচি শুনে এসে তাদের উদ্ধার করে পুলিশে খবর দেয়। এ ঘটনায় ২৪ সেপ্টেম্বর বিকালে ৯ অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে থানায় দুটি মামলা করা হয়। পুলিশ মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেফতার ও ডাকাতির মালামালসহ ডাকাতির সময় ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্রসহ অটোরিকশা উদ্ধার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
ইত্তেফাক/ইউবি