গত ১০০ বছরের ইতিহাসে রংপুর জেলায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতে ডুবে গেছে রংপুর শহরের অধিকাংশ পাড়া-মহল্লা। কোথাও হাঁটু কোথাও কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে সড়কসহ বাড়িঘর ও স্থাপনা। আকস্মিক পানির কবলে পড়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে নগরীর সাধারণ মানুষ। এই পানিতে ক্ষতি হয়েছে অপূরণীয়।
শনিবার সন্ধ্যা থেকে রবিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯ টা পর্যন্ত ২৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায় বিভিন্ন স্কুল কলেজে আশ্রয় নিয়েছেন স্থানীয়রা। বাড়িঘর পানিতে ডুবে যাওয়ায় তাদের বাধ্য হয়ে স্কুল কলেজে আশ্রয় নিতে হয়েছে। কেউবা আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, হঠাৎ করে এভাবে জলাবদ্ধতায় অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তাদের। বাড়ির আসবাবপত্র থেকে শুরু করে মূল্যবান কাগজপত্র সব নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও ব্যবসায়ীক মালামাল, জিনিসপত্র ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিও নষ্ট হওয়ার পথে। বিশেষ করে যারা একতলা বাড়িতে থাকেন তাদের বিছানাপত্রও নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে আশেপাশের স্কুল কলেজে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকেই। নগরীর সমাজকল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয়েও অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কয়েকটি ভবন খুলেও দেয়া হয়েছে।
বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া কয়েকজন জানান, এত বড় একটি দুর্যোগে আগে থেকে সিটি কর্পোরেশন অথবা আবহাওয়া অফিস কেউই কোন সতর্কবাণী বা পূর্বাভাস দেয়নাই। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা।
আশ্রয় নেওয়া মুলাটোল থানা মোড় এলাকার জাহাঙ্গীর,আলমগীর, গৃহিণী আছিয়া বেগম জানান, তার বাড়িতে বিছানার উপরে পানি উঠে গিয়েছে। সব জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে পড়েছে।
আরো পড়ুনঃ করোনা আক্রান্ত হয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম মারা গেছেন
ক্ষুদ্রব্যাবসায়ী নুরজাহান বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি ছোট ব্যবসায়ী। ভাড়া বাড়িতে থাকি। হঠাৎ এই পানিতে মালামালসহ বাড়ির সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে। তিল তিল করে গড়ে তোলা সংসারের সবকিছু নষ্ট হয়ে গেলো। এ সময় দুপুর হলেও প্রশাসন বা সিটি কর্পোরেশনের কেউ খোঁজখবর না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এদিকে হঠাৎ এই জলাবদ্ধতায় নগরীর বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। শুকনা খাবার ও নিরাপদ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। রান্নার ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই না খেয়ে আছেন। এতে এগিয়ে এসেছে স্থানীয় অনেক স্বেচ্ছাসেবী। নিজেদের উদ্যোগে খাবার রান্না করে সরবরাহ করছেন।
নগরীর পানিবন্দীদের উদ্ধারে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি টিম। তারা নৌকায় করে মানুষদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানান, গত ১০০ বছরের ইতিহাসে রংপুরে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড এটি। রংপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শনিবার সন্ধ্যা থেকে রবিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯ টা পর্যন্ত ২৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই ধারা আরো ২ দিন অব্যাহত থাকতে পারে।
ইত্তেফাক/এমএএম