বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মানবপাচার রোধে কক্সবাজারে পৃথক ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি

আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২০:৩২

মানবিক সহায়তা দিতে গিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে এখন পৃথিবীর বৃহত্তম শরণার্থী ক্যাম্পের অবস্থান। ১১ লাখের অধিক রোহিঙ্গার মধ্যে সিংহভাগই নারী। উপকূল সমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে দারিদ্র্যতার কারণে এটি মানবপাচারের ঝুঁকিপ্রবণ এলাকাও। এসব বিষয় মাথায় রেখে মানবপাচার রোধে কক্সবাজারে পৃথক ট্রাইব্যুনাল গঠন করা জরুরি।    

রবিবার কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল জোনে একটি আবাসিক হোটেলের হলরুমে ‘রাইটস যশোর’ নামে বেসরকারি একটি সংস্থা আয়োজিত ‘মানবপাচার প্রতিরোধ আইন-২০১২’ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে দিনব্যাপী ওরিয়েন্টেশন সভায় এ দাবি করা হয়। 

শরণার্থী বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএনএইচসিআর'র সহযোগিতায় চলমান মানবপাচার প্রতিরোধ প্রকল্পের আওতায় 'রাইটস যশোর'
সংস্থার নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিকের সভাপতিত্বে সভায় বক্তারা আরও বলেন, মানবপাচার আগেও ছিল, এখনো আছে। যদি পাচারের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হতো তবে ঘৃণ্য এ অপরাধের সাথে কেউ জড়াতো না।

বক্তারা বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে নারী পুরুষ এবং শিশুসহ দেশ থেকে পাচার হয়েছ ৫২৬ জন। যারমধ্যে ১৯১ জন পুরুষ, ৬৫ জন নারী এবং ৩৭ জন শিশু। এছাড়াও পাচারের সময় সীমান্ত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ২৩৩ জনকে। অথচ এ সময়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে ১০১টি। মানবপাচার মামলায় আটক হয়েছে মাত্র এক দালাল। মানবপাচার মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি না হওয়ায় দেশে পাচার বেড়েছে। কক্সবাজারেও বেড়েছে মানব পাচার মামলা। এখানে একটি মানবপাচার ট্রাইব্যুনাল চালু হলে এ সংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা যেত।

বক্তারা বলেন, জলসীমান্ত বিস্তৃত কক্সবাজার এমনিতে মাবনপাচারের নিরাপদ রুট। তার উপর মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত্ত সাড়ে এগারো লাখ রোহিঙ্গার অবস্থান রয়েছে। এতে চরম ঝুঁকিতে আছে স্থানীয়রা। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশী পাসপোর্টে কিংবা অবৈধ পথে বিদেশ যাচ্ছে। বিদেশে কোন অপরাধে জড়িয়ে পড়লে দোষটা এসে পড়ে বাংলাদেশের উপর। অনেকক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তাগণ বাড়ির কাজের জন্য রোহিঙ্গা কিশোরীদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণে বাসাবাড়িতে নিচ্ছে বলেও খবর এসেছে।            তাই মানবপাচার নিয়ে পূর্বের দায়ের করা মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন।

সভায় ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি মিনহাজুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি ভারতের আসাম এবং মিজুরামেও রোহিঙ্গাদের পাচার করা হচ্ছে। বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে তুলে ধরে রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের সচেতন করা দরকার। ইউএনএইচসিআর ভারতে পাচার বেশকিছু রোহিঙ্গাকে ফেরত এনেছে।   

এতে বক্তব্য রাখেন, প্রকল্প পরিচালক প্রদীপ দত্ত, প্রজেক্ট ম্যানেজার মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেট তাহমিদ আকাশ।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সাল হতে চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত দেশে মানবপাচার মামলা হয়েছ ৪ হাজার ৬৬৮টি। যার মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ২৪৫ টি মামলা। মানবপাচার প্রতিরোধে আলাদা ট্রাইব্যুনাল করে বিচার কার্য দ্রুত করা জরুরী।

ইত্তেফাক/এসি