বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ভুয়া কাবিন করে পেনশনের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৯:২৬

নওগাঁর রাণীনগরে মৃত সরকারি কর্মচারীর পেনশনসহ অন্যান্য অর্থ হাতিয়ে নিতে রহিমা ওরফে আইমুনি বিবি (৪৫) নামের এক নারীর সাথে বিয়ের ভুয়া কাবিন নামা তৈরির অভিযোগ উঠেছে কথিত ভুয়া কাজী বেলাল হোসেনের বিরুদ্ধে। তবে বেলাল হোসেন তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে দীর্ঘদিন থেকে জারিকারক (প্রসেস সার্ভার) হিসেবে নওগাঁ সদর পৌর এলাকার বাঙ্গাবাড়িয়া মহল্লার বাসিন্দা মরহুম আমীর আলীর ছেলে আজাহার আলী (৫০) কর্মরত ছিলেন। কর্মরত অবস্থায় ২০১৮ সালের ৮আগস্ট মারা যান তিনি। পরে আজাহারের পরিবার পেনশনসহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধা পাওয়ার জন্য আবেদন করে। কিন্তু হঠাৎ করে বাঁধ সাধে রাণীনগর সদর উপজেলার পশ্চিম বালুভরা গ্রামের আজিবর শাহর তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী মোছা. রহিমা ওরফে আইমুনি বিবি (৪৫)। রহিমা নিজের নাম গোপন করে আইমনি হিসাবে ২০১২ সালের ৩ জানুয়ারি প্রথম স্বামী  আজিবরকে তালাক দেয়। পরে নওগাঁ পৌরসভা থেকে আইমনি খাতুন নামে জন্ম সনদ নিয়ে রাণীনগর নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে কর্মরত ঝাড়ুদার শ্রী মুন্না হাড়িকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করে খালেক নাম দিয়ে ২০১৩ সালের ৭ফ্রেবুয়ারি তাকে বিয়ে করেন। ২০১৪ সালের ২৬ আগস্ট দ্বিতীয় স্বামী মুন্না হাড়ি মারা গেলে পেনশনসহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধাভোগী হয় রহিমা ওরফে আইমুনি বিবি। 

স্থানীয়রা বলেন, রহিমা ওরফে আইমুনি বিবির বিয়ে করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া ছিলো প্রধান নেশা। ইতিমধ্যেই ৬-৭জনকে বিয়ে করে তাদের তালাক দিয়েছে রহিমা বিবি। আজাহার আলীর মৃত্যুর দীর্ঘদিন পর রহিমা ২নং কাশিমপুর ইউনিয়নের কথিত ভুয়া কাজী বেলাল হোসেনের স্বাক্ষর করা নিকাহ নামা দাখিল করে নিজেকে আজাহারের তৃতীয় স্ত্রী দাবি করে পেনশনসহ যাবতীয় অর্থের দাবি করে। আর এতেই পেনশনের পুরো প্রক্রিয়া আটকে যায়। 

জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন তদন্ত ও শুনানিঅন্তে ২০১৯ সালের ১২ মে (স্মারক নং-০৫.৪৩.৬৪৮৫.০০০.০২.০০৯.১৯-৬৫৯) বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। 

এতে বলা হয়েছে, রহিমার জন্ম নিবন্ধন সনদে বর্ণিত নাম ও জন্ম তারিখের সাথে জাতীয় পরিচয়পত্রের বর্ণিত নাম ও জন্ম তারিখের মিল নাই। জাতীয় পরিচয়পত্রে রহিমা নাম থাকলেও তার দ্বিতীয় মৃত স্বামী শ্রী মুন্না হাড়ির পেনশনের কাগজপত্রে আইমুনি নাম রয়েছে। ২নং কাশিমপুর ইউনিয়নের মো. বেলাল হোসেন স্বাক্ষরে যে নিকাহ রেজিস্ট্রশন করা হয়েছে তার কোন কার্যালয় নেই এবং উক্ত ব্যক্তি সরকার কর্তৃক অনুমোদন প্রাপ্ত নিকাহ রেজিস্ট্রার নয়। এছাড়াও ২০১৭ সালের ১৬ মে তারিখে তারিখে ওই নামের বর ও কনের ২নং কাশিমপুর নিকাহ রেজিস্ট্রারের অনুকূলে কোন নিকাহ রেজিস্ট্রেশন সম্পাদন হয় নাই অর্থাৎ দাখিলকৃত নিকাহ রেজিস্ট্রেশনের ও অন্যান্য কাগজপত্রের কোন সত্যতা নেই। মৃত আজাহার আলীর পরিবারের দাখিল করা কাগজপত্রের সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করা হয়েছে। এখানে প্রতারক রহিমা ওরফে আইমনি খুব একটা সুবিধা করতে না পেরে  চলতি বছরের শুরুর দিকে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে আদালতে মিথ্যা মামলা দিলে পেনশন প্রাপ্তির সকল কার্যক্রম স্থগিত হয়ে আছে। 

আরও পড়ুন: স্বাস্থ্যবিধি মেনে ডামুড্যায় প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উদযাপন

মৃত আজাহার আলীর প্রথম স্ত্রী জোসনা বিবি অভিযোগ করে বলেন, বিয়ের ভুয়া নকল কাগজপত্রাদি দিয়ে স্বামীর পেনশনসহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য ভুয়া কাজী বেলালের সহায়তায় রহিমা ও তার সহযোগী চক্ররা পায়তারা করেছে। আমার স্বামী কখনো আমাকে বলেনি যে রহিমা বা আইমুনি বিবি নামে তার আরেক স্ত্রী আছে। আদালতে রহিমা মিথ্যে মামলা করায় স্বামীর পেনশনের অর্থ পাচ্ছি না। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় চরম হয়রানির শিকার হচ্ছি ও অভাবের সংসারে ছেলে-মেয়ে নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছি। 

রহিমা ওরফে আইমুনি বিবি নিরুদ্দেশ হওয়ার কারণে এবং মোবাইল ফোন নম্বর না পাওয়ার কারণে তার সাথে কথা বলা এবং বক্তব্য পাওয়া নেওয়া সম্ভব হয়নি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল মামুন বলেন, ‘রহিমার দাখিল করা নিকাহ রেজিস্ট্রেশনসহ অন্যান্য কাগজপত্র সঠিক নয় বলে বিস্তারিত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।’ 

ইত্তেফাক/এএএম