শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বাঘায় পদ্মার ভাঙনের মুখে এবার কমিউনিটি ক্লিনিক

আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২১:০৭

রাজশাহীর বাঘায় পদ্মার ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে চরকালিদাস খালি ও লক্ষীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নিলামে বিক্রির পর এবার হুমকির মুখে দাঁড়িয়েছে কালিদাসখালী কমিউনিটি ক্লিনিক। মাত্র ৩০ মিটার দুরে অবস্থান করছে এই ক্লিনিকটি। পদ্মার পাড় যেভাবে ভাঙছে তাতে যেকোন সময় এ ক্লিনিকটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি চরাঞ্চলের অবহেলিত মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষে পদ্মা নদীর পাশে চকরাজাপুর ইউনিয়নের কালিদাসখালী চরে এই কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করেন। ২০১১ সাল থেকে এই ক্লিনিকে সহকারী মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট দিয়ে সপ্তাহে এক দিন চিকিৎসা দেওয়া হতো। কিন্তু পদ্মার ভাঙনে চরের মানুষের আশ্রয়নের পাশাপাশি চিকিৎসা সেবাটিও কেড়ে নিতে চলেছে রাক্ষসী পদ্মা। 

এই ভাঙনে শুধু চরের কমিউনিটি ক্লিনিক নয়, গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে চরকালিদাসখালী ও লক্ষীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পদ্মাগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া দুই শতাধিক বাড়ি, মসজিদ, হাজার হাজার বিঘা জমি পদ্মা গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ওই চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুল আযম।

তিনি বলেন, প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের মানুষের এখন আর অপচিকিৎসার শিকার হয়ে অকালে প্রাণ দিতে হচ্ছে না। এই অঞ্চলের মানুষে প্রাণ বাঁচাচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক সেবা নিয়ে। কিন্তু সেটাও এখন হুমকির মুখে পড়েছে। 

মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে সরেজমিনে গেলে কথা হয় কালিদাসখালী চরের বুলু বেওয়া (৬৮) নামের এক বিধবার সাথে। এ সময় তিনি বলেন, ‘বুকে ব্যথা, সর্দি, কাশি, চোখে সমস্যা ছিলো বহুদিন। অবশেষে এই কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে ভালো আছেন।’ 

আরও পড়ুন: এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ মামলার আরেক আসামি গ্রেফতার

লক্ষীনগর চরের আজগর হোসেন (৬৫) বলেন, ‘গত কয়েক দিন যাবত হাঁপানি ও শ্বাস কষ্টে ভুগছিলাম। আমার পক্ষে ১৫ কিলোমিটার পথ পার হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়া সম্ভব না। কালিদাসখালী কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নিয়ে ভাল আছি।’ 

চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিক চালু হওয়ার ফলে ঝাড় ফোক তাবিজ কবিরাজি অপচিকিৎসা অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে পদ্মার চরাঞ্চলে। বর্তমানে মানুষ বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছে। অবহেলিত পদ্মার চরের মানুষের স্বাস্থ্য সেবার মানও বাড়ছে। তারা সেবা পাচ্ছে। কিন্তু পদ্মাগর্ভে সেটাও বর্তমানে চরম হুমকির মুখে পড়েছে।’

বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আকতারুজজামান বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে অবহেলতি পদ্মার চরে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে কাজ করছেন। কিন্তু বর্তমানে পদ্মার ভাঙনে কমিউনিটি ক্লিনিকটি হুমকির মধ্যে পড়েছে।’ এ বিষয়ে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে অবগত করেছেন তবে অদ্যাবধি কোন নির্দেশনা আসেনি বলে তিনি জানান। 

ইত্তেফাক/এএএম