বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

চাটমোহরে রাস্তা-সেতুর অভাবে ৫ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ

আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০১৯, ১৬:০৮

পাবনার চাটমোহর উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে নিমাইচড়া ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম ‘পার নিমাইচড়া’। নিমাইচড়া বাজার থেকে পূর্বদিকে করতোয়া নদীর পাড় দিয়ে একটি চিকন কাচা রাস্তা নেমে গেছে পার নিমাইচড়া গ্রামে। পায়ে হাটা পথ চলে গেছে এঁকে-বেঁকে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি গ্রামে যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা। ওসই রাস্তা শেষে গ্রামের আরেক অংশে যেতে মাঝখানে নদী পার হতে হয় একটি নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে। রাস্তা ও একটি সেতুর অভাবে দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ওই এলাকার পাঁচটি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ।

বছরের বেশিরভাগ সময় ওই এলাকায় জমে থাকে পানি। একমাত্র ভরসা নিজেদের তৈরি বাঁশের সাঁকো। ওই বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করছেন অসংখ্য মানুষ। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। আশেপাশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত কোমলমতী শিক্ষার্থীরা পড়েছে বিপাকে। মাটির সরু রাস্তা দিয়ে পায়ে হেঁটে যাতায়াত করা গেলেও, সেতু না থাকায় দীর্ঘদিন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন তারা। সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে হয় যখন কেউ মারা যান। তার মরদেহ দাফন করতে নদীতে নৌকায় করে পার করে নিয়ে যেতে হয়।

আরো পড়ুন: মামার বাড়িতে মাসির মদদে গণধর্ষণের শিকার কিশোরী

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিমাইচড়া বাজার পাশে পার নিমাইচড়া, মাঝগ্রাম,খন্দবাড়িয়া,শিবরামপুর ও শীতলাই গ্রামের মানুষ ওই রাস্তা ও বাঁশের তৈরি ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করছেন। করতোয়া নদীর পাড় দিয়ে যাতায়াতের জন্য সরকারি রাস্তা থাকলেও দখলদাররা রাস্তা দখল করে বানিয়েছেন ঘরবাড়ি। ভাঙনে অনেকটাই চলে গেছে নদী গর্ভে। ফলে হারিয়ে গেছে রাস্তা। তাই বাধ্য হয়ে নদীর পাড় দিয়ে চিকন রাস্তায় যাতায়াত করছে এলাকাবাসী। আর নদী পারাপারের জন্য গ্রামবাসীরা মিলে তৈরি করেছেন একটি বাঁশের সাঁকো। কোমলমতী শিশু থেকে শুরু করে নানা বয়সের শিক্ষার্থীরা হাতে বই নিয়ে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করে।

বেশিরভাগ অভিভাবক সন্তানকে স্কুলে পাঠিয়ে দুর্ঘটনা ঘটার ভয়ে থাকেন। গত সোমবার সনেকা খাতুন নামে এক গৃহবধূ ওই বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হতে গিয়ে পানিতে পড়ে যান। দীর্ঘদিন ধরে এমন দুর্ভোগ চলে আসলেও এ ব্যাপারে কারো কোন মাথা ব্যথা নেই।

পার নিমাইচড়া গ্রামের সাদ্দাম হোসেন, আফজাল হোসেন, সনেকা খাতুনসহ বেশ কয়েকজন জানান, প্রতিবছর ভোটের সময় এলেই নেতারা রাস্তা ও সেতু তৈরির আশ্বাস দেন কিন্তু পরে আমাদের দুর্ভোগের কথা কেউ মনে রাখেন না। গ্রামের কোন মানুষ মারা গেলে মরদেহ দাফন করা যায় না। নৌকায় করে অন্য গ্রামে গিয়ে মরদেহ দাফন করতে হয়। বাচ্চারা স্কুলে যাওয়ার সময় বাঁশের সাঁকো পারাপারের সময় খুব ভয়ে থাকি। কখন যে কি হয়! অবিলম্বে ওই গ্রামের রাস্তা ও একটি সেতু তৈরির দাবি জানান তারা।

নিমাইচড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী কামরুজ্জামান খোকন বলেন, ‘ওই এলাকা দিয়ে অসংখ্য মানুষ চলাফেরা করে। মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। বিশেষ করে ছোট ছোট শিশুদের খুব কষ্ট হয়। এর আগে রাস্তায় কিছু মাটির কাজ করা হয়েছে এবং ৫০ ফিট সেতু তৈরির একটি প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যেই সমস্যা নিরসন হবে।’

চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সরকার অসীম কুমার বলেন, ‘আমি নিজে গিয়ে দুর্ভোগের বিষয়টি দেখেছি। সেখানে একটি বড় বাজেটের কাজ করতে হবে। যেটা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্ভব নয়। তবে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ আমরা লিখে বিষয়টির সমাধানের চেষ্টা করবো।’

ইত্তেফাক/বিএএফ