শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

গেজেটের পরও প্রত্নতত্ত্বকে হস্তান্তর করা যাচ্ছে না কুষ্টিয়ার ‘টেগর লজ’

আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২০, ১৫:৪৯

কুষ্টিয়ায় গড়াই নদী সংলগ্ন শহরের মিলপাড়ায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিধন্য বেদখল হয়ে যাওয়া ‘টেগর লজ’ পুনরুদ্ধারের পর রাষ্ট্রপতির আদেশে সরকারি গেজেটভুক্তি হলেও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে হস্তান্তর করা হচ্ছে না। ফলে এ বাড়িটি ঘিরে রবীন্দ্র মিউজিয়াম ও সংগ্রশালা রূপান্তরে সরকারি উদ্যোগ পড়েছে মুখ থুবড়ে। এদিকে কুষ্টিয়া পৌরসভা কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ দেড় যুগেও মিউজিয়াম বাস্তবায়নে এগুতে পারেনি। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জমিদারি পরিচালনায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৮৯ সালে কুষ্টিয়ার শিলাদহে আসেণ।  ১৯০১ সাল পর্যন্ত কবি থেকেছেন শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে। জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি কুষ্টিয়া শহরের মিলপাড়ার ‘টেগর লজ’ থেকে কবি ব্যবসা পরিচালনা করতেন। ওই সময় টেগর এন্ড কোং নামে তিনি কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন করেন। কোলকাতা থেকে শিলাইদহে যাওয়ার সময় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘টেগর লজে’ বিশ্রাম নিতেন। বিশ্রাম  গ্রহণের পর নৌপথ কিংবা পালকিযোগে কবি যেতেন শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে। দেশ বিভাগ ও পরে জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পর কুঠিবাড়িসহ অন্য সম্পত্তি সরকারি নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু ‘টেগর লজটি’ নানা জনের হাত বদলের পরিক্রমায় বেদখল হয়ে যায়। সর্বশেষ ১৯৮০ সালে কুষ্টিয়ার মিলপাড়ার ছালেমা খাতুন নামের এক গৃহবধু কাগজ-পত্র প্রস্তুত ও কারসাজির মাধ্যমে বাড়িটি নিজ নামে রেজিস্ট্রি করে নেন। পরে ২০০১ সালে এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিক বেদখল হওয়া ঐতিহ্যমন্ডিত এ বাড়িটি পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। 

কুষ্টিয়া পৌরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান খন্দকার ইসরাইল হোসেন আফুকে আহ্বায়ক ও লালন একাডেমির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক তাইজাল আলী খানকে সদস্য সচিব করে গঠিত পুনরুদ্ধার কমিটির প্রচেষ্টায় সমঝোতার ভিত্তিতে বাড়িটির মালিকানা দাবিদার সালেমা খাতুনকে সাত লাখ টাকা পরিশোধ সাপেক্ষে ২০০২ সালে ‘টেগর লজ’ দলিলমূলে কুষ্টিয়া পৌরসভার নামে রেজিস্ট্রি করা হয়। কিন্তু সুদীর্ঘ দেড় যুগ পরও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ‘টেগর লজ’ ঘিরে মিউজিয়াম ও সংগ্রহশালা রূপান্তরে সফল হতে পারেনি। পরে ২০১৭ সালে ১২ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে পুরার্কীতি হিসাবে ‘টেগর লজ’ প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের অনুকুলে সরকারি গেজেট প্রকাশিত হয়। কিন্তু কুষ্টিয়া পৌরসভার বর্তমান মেয়র আনোয়ার আলী ‘টেগর লজ’ হস্তান্তরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ডিজিকে আপত্তি জানিয়ে পত্র দেয়। ফলে সরকারি গেজেটভুক্তির পরও ‘টেগর লজ’ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর হস্তান্তর পাচ্ছে না।

পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী জানান, ‘টেগর লজটি’ কুষ্টিয়া পৌরসভার অনুকূলে রেজিষ্ট্রিকৃত সম্পত্তি। দীর্ঘকাল যাবত এটি রয়েছে পৌরসভার নিয়ন্ত্রণে। এছাড়া ভবনটি হস্তান্তরে স্থানীয় সংস্কৃতি কর্মীদেরও রয়েছে জোর আপত্তি । 

ছয় কক্ষবিশিষ্ট লালচে রংয়ের দ্বিতল দৃষ্টিনন্দন ভবনের এ বাড়িটি বর্তমানে অযত্নে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। বাড়ির নিচতলার দক্ষিণে বিশাল বারান্দা ও পাকা ভিত্তির অনুষ্ঠান মঞ্চসহ রয়েছে একচিলতে আঙ্গিনা। শিলাইদহের কুঠিবাড়ীটি সরকারি তত্ত্বাবধানে পর্যটক আকর্ষনীয়  হলেও ‘টেগর লজটি’ অবহেলিত। 

কুঠিবাড়ি, পতিসর ও দক্ষিণ ডিহির মত ‘টেগর লজটির’ গৌরব-ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার দাবি জানান সাংস্কৃতিকর্মী ও দৈনিক কুষ্টিয়া বার্তা পত্রিকার সম্পাদক মো. খাদেমুল ইসলাম। 

সাংস্কৃতিক কর্মী ও কুষ্টিয়া জজ কোর্টে আইনজীবী শরিফুল আলম কামাল জানান, কবির স্মৃতিধন্য ‘টেগর লজটি’ যথাযথ সংরক্ষণ ও মর্যাদা রক্ষা সরকারের দায়িত্ব-কর্তব্য। এ বাড়িটি ঘিরে রবীন্দ্র মিউজিয়াম ও সংগ্রহশালা রূপান্তরে তিনি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আশু হস্তক্ষেপ দাবি করেন। 

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক আফরোজা খান মিতা জানান, পুরার্কীতি স্থাপনা হিসাবে ‘টেগর লজ’ সরকারি তত্ববধানে পরিচালিত হওয়ার বিধি-বিধান থাকলেও কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়রের আপত্তিতে তা প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরকে হস্তান্তর করা হয়নি।    

ইত্তেফাক/এসি