শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

চিকিৎসার নামে অভিনব প্রতারণা, ভুয়া ডাক্তার গ্রেফতার

আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২০, ১৬:১৩

ম্যাজিক মেশিনে হাত রাখলেই নির্ণয় করা যায় মানবদেহের মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে হার্ট, কিডনি, ফুসফুসসহ শরীরের ৪২ প্রকারের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার নানা অবস্থা। তাৎক্ষণিক রিপোর্টে চিকিৎসাপত্রও ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে থাকে ছয় থেকে সাত হাজার টাকার ওষুধ। এ প্রতারণার ফাঁদ পাতা হয়েছিল পাবনা পৌর এলাকার থানাপাড়া মহল্লায়।

সেখানে ’ইউনি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস’ নাম দিয়ে গত প্রায় একবছর ধরে আটতলা ভবনের চারতলায় তিনটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে আসছিল শহরের নয়নামতি মহল্লার আকবর হোসেন।বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানের মালিক ও চেয়ারম্যান আকবর হোসেনকে ম্যাজিক মেশিনসহ আটক করেছে পুলিশ। আকবর বিবি দাখিল মাদ্রাসা থেকে এসএসসি পাস করে নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে ইউনানি ও অ্যালোপ্যাথিক পদ্ধতির চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন। আকর্ষণীয় বেতনের লোভ দেখিয়ে জামানত নিয়ে প্রায় অর্ধশত নারী পুরুষকে নিয়োগ দেয় ইউনি হেলথ সার্ভিস নামের প্রতিষ্ঠানটি।

ইউনি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের স্বাস্থ্যকর্মী ফারজানা লাবণী জানান, মেশিনে হাত রাখা মাত্র, কম্পিউটার মনিটরে উঠে আসছে মানবদেহের মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে হার্ট, কিডনি, ফুসফুসসহ শরীরের ৪২ প্রকারের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ও শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার অবস্থা। তাৎক্ষণিক দেয়া রিপোর্টে চিকিৎসাপত্র ও ছয় থেকে সাত হাজার টাকার ওষুধে সুস্থ হবে রোগী। কর্তৃপক্ষের এমন কথায় বিশ্বাস করে তিনি তার বেশ কয়েকজন স্বজন ও প্রতিবেশীদের চিকিৎসা গ্রহণের জন্য রাজি করিয়ে আকবর এর চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে আসি। হাতের স্ক্যান পরীক্ষার জন্য এক হাজার টাকা ও পরে প্যাকেজ চিকিৎসায় নিজেদের ব্যবস্থা করা ওষুধ বাবদ আট থেকে দশ হাজার টাকা করে নেয়া হয় তাদের কাছে। ওষুধের কোর্স সম্পন্নের পরও কোন রোগীরই স্বাস্থ্যের উন্নতি না হওয়ায় তারা তাকে নানা প্রশ্ন করেন। এতে তারও সন্দেহের সৃষ্টি হয়।

একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানান, প্রতিষ্ঠানটির স্বাস্থ্যকর্মী আবু তালেব, মনিরা, নাদিরা, আফরিন, শারমিন, সালমা, নাজমুল, আজিজুলসহ বেশ কয়েকজন। 

আরও পড়ুন: সাধারণ দর্শকের চোখে এভাবেই জয়ী হয়ে ওঠেন নির্মাতা!

স্বাস্থ্যকর্মী মনিরা বলেন, প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় চাকরি ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই । আমরা সবাই মিলে বকেয়া বেতন চাইলে তারা নানা টালবাহানা শুরু করে। বিষয়টি আমরা গণমাধ্যম কর্মীদের জানালে তারা এসে মালিক এম এ আকবরের সাথে কথা বলে ইউনি হেলথের প্রতারণার বিষয়টি ধরে ফেলেন। পরে পুলিশ এসে তাকে আটক করে নিয়ে যায় ।

পাবনা সদর থানার ওসি নাসিম আহমেদ বলেন, খবর পেয়ে বুধবার রাতে ইউনি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের অফিসে অভিযান চালাই। ওই সময় প্রতিষ্ঠানের মালিক এম এ আকবর স্বাস্থ্যসেবা প্রদান কিংবা পরীক্ষার কোনো অনুমোদনপত্র দেখাতে ব্যর্থ হলে তাকে আটক করা হয়।

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক ডা. সালেহ মোহম্মাদ আলী জানান, স্পর্শের মাধ্যমে একসাথে ৪২টি পরীক্ষার এমন কোন মেশিন চিকিৎসা বিজ্ঞানে আছে বলে আমার জানা নেই,বিষয়টি বাস্তবসম্মতও নয়। ল্যাবরেটরি পরীক্ষা ছাড়া রক্ত ও মস্তিষ্কের পরীক্ষা কিভাবে সম্ভব আমার জানা নেই।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মেহেদী ইকবাল জানান, ইউনি ওয়াল্ড সার্ভিস নামে কোন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কে জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ অবগত নয় । তাদের আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের বিষয়ে  আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে, বৃহস্পতিবার বিকেলে এ ঘটনায় সদর থানার এসআই জহরুল ইসলাম বাদী হয়ে বিশেষক্ষমতা আইনে ও স্বাস্থ্যকর্মী জাকির হোসেন বাদী হয়ে পৃথকভাবে সদর থানায় প্রতারণা মামলা দায়ের করেছেন। এই মামলায় এম এ আকবরকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

ইত্তেফাক/এএএম