শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হানকে হত্যার পেছনের রহস্য বের করতে হবে

আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২০, ০৩:৩৪

নগরীর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশি নির্যাতনে যুবক রায়হানকে শুধু ১০ হাজার টাকার জন্য হত্যা করা হয়েছে—তা তার মা সালমা বেগম বিশ্বাস করেন না। তিনি মনে করেন রায়হান খুনের পেছনে আরো রহস্য রয়েছে।

গত ১১ অক্টোবর নির্যাতনে মারা যান নগরের আখালিয়া এলাকার যুবক রায়হান আহমদ (৪৪)। তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর ফাঁড়ি থেকে ১০ হাজার টাকা দাবি করে রায়হানের মায়ের কাছে ফোন দেওয়া হয়। টাকা নিয়ে তার চাচা তাদের কাছে গেলেও রায়হানকে আর জীবিত দেখতে পান না। সংবাদমাধ্যমে আলাপকালে সালমা বেগম বলেন, শুধু টাকার জন্য নয়, রায়হানকে হত্যার পেছনে অন্যকিছু আছে।

নইলে এভাবে কেউ মারে? তিনি বলেন, যেভাবে কষ্ট দিয়ে মারা হয়েছে আমার সন্তানকে, তার চেয়ে যদি গুলি করে মেরে ফেলত তাতেও এত কষ্ট পেতাম না—এমন হূদয়বিদারক কথা শুনে অনেকেরই চোখ ছল ছল হয়ে ওঠে।

এদিকে রায়হানের মৃত্যুর পর ময়নাতদন্তে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন পেয়েছেন চিকিত্সকরা। চিকিত্সকরা বলেছেন, রায়হানের দেহে ভোঁতা অস্ত্রের আঘাত ছিল। এদিকে এই ঘটনার প্রতিবাদে সিলেট এখন আন্দোলনমুখর। তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয় সিলেট মহানগর পুলিশ।

অন্যদিকে রায়হানকে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির বহিষ্কৃত ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূইয়াকে ১৩ দিনেও পুলিশ গ্রেফতার করতে না পারায় রায়হানের পরিবারসহ সর্বত্র অসন্তোষ বিরাজ করছে। আকবর নাকি বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িকে টাকশালে পরিণত করেছিলেন। এমন কথা চলছে সর্বত্র । রায়হানের মা সালমা বেগম মনে করেন, এই ঘটনার সঙ্গে আরো অনেকে জড়িত। আকবরসহ আরো কয়েক জন অভিযুক্ত শনাক্ত হওয়ার পরও গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সালমা বেগম।

তিনি বলেন, ছেলে হত্যার বিচারের নিশ্চয়তা চাই। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী একজন মা। তার কাছে আমার আবদার, রায়হানের পর যেন চিরতরে বন্ধ হয় পুলিশি হেফাজতে সব হত্যা ও নির্যাতন। সালমা বেগম বলেন, ফাঁড়িতে নির্যাতনের পর রায়হানের পরনের শার্ট-প্যান্ট পালটে দেওয়া হয়। মর্গে লাশের পরনে যে শার্ট-প্যান্ট ছিল এগুলো রায়হানের না। মর্গে ছেলের লাশ দেখে এই ব্যাপারটি আমিই প্রথম চিত্কার করে বলেছিলাম। তিনি বলেন, মারতে মারতে ফাঁড়িতেই মেরে ফেলা হয় রায়হানকে। তারা পোশাক বদল করে হয়তো বেওয়ারিশ লাশ বানানোর চেষ্টা করছিল। তিনি জানান পোশাকগুলো তিনি রেখে দিয়েছেন। তদন্ত করলে অনেক কিছু বের হতে পারে। সালামা বেগম বলেন রায়হান হত্যার পর ঘটনা ধামাচাপা দিতে তারা ছিনতাই নাটক সাজিয়েছিল। তিনি বলেন অসত্য প্রচারণা টেকেনি।

ঘটনার পর থেকে আকবর লাপাততা হওয়ার আগে বন্দরবাজার ফাঁড়ির সিসি ক্যামেরার হার্ড ডিস্ক নষ্ট করে সেখানে একটি নতুন হার্ড ডিস্ক স্থাপন করেন। তিনি হত্যার অনেক আলামত নষ্ট করে দেন। তবে তদন্তকারী সংস্থা অনেক তথ্য পেয়েছে এরই মধ্যে।

ইত্তেফাক/কেকে