শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

কোন অপশক্তির কাছে মাথা নত করবেন না: নিক্সন চৌধুরী

আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২০, ১৭:৩০

ফরিদপুর ভাঙ্গা উপজেলা প্রশাসনের মাসিক সমন্বয় রবিবার দুপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ফরিদপুর-৪ আসনের জনপ্রিয় সাংসদ মুজিবর রহমান চৌধুরী নিক্সন প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। এসময় প্রশাসনের কর্মকর্তারা ও বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রকিবুর রহমান খান ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল আমিন মিয়ার নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে অভিযোগ করেন।
 
অভিযোগ শুনে সাংসদ নিক্সন চৌধুরী সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, কোন অপশক্তির কাছে মাথা নত করবেন না। অনিয়ম ও দুর্নীতিবাজরা যত ক্ষমতাধরই হোক না কেন জনগণকে সাথে নিয়ে তা প্রতিহত করা হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছেন। দুর্নীতি প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মনে রাখবেন দুর্নীতিবাজরা সব সময়ই দুর্বল। তাদের ফাঁকা আওয়াজে ভয় না পেয়ে সরকারের দেওয়া দায়িত্ব আপনারা পালন করুন।

এসময় নাসিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লাবলু মিয়া বলেন, নাসিরাবাদ এলাকায় আড়িয়াল খা নদী খননের বালু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার ভূমি নিজে স্থানীয় লোকদের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে সেখানে বালু ভরাট করে তা প্রতিদিন শত শত ট্রাক বালু বিক্রি করছেন। দীর্ঘ কয়েক মাস হয়ে গেলেও আজ ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারের কোষাগারে একটি টাকাও জমা পড়েনি। তারা দুজনে মিলে স্থানীয় লোকজনের জমি দখল করে নাম মাত্র টাকা দিয়ে দীর্ঘদিন যাবত সরকারি চাকরির অন্তরালে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। সরকার যদি উক্ত বালু টেন্ডার দিত তবে সরকারের খাতায় এতদিন অর্ধকোটি টাকা জমা হয়ে যেত। বিষয়টি এজেন্ডা হিসাবে নিয়ে সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের আইনের আওতায় আনার জন্য এমপি মহদোয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

অপরদিকে উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা আবুল কালাম জানায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের সূর্য সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ১৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৩৬ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বাড়ী তৈরি করা একটি প্রকল্প দেন। সেই প্রকল্পের ফাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রকিবুর রহমান খান তার কাছ থেকে জোর করে নিয়ে যায় এবং তার সমমনা কিছু মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পরামর্শ করে আমার কাছ থেকে জোর করে সহি করে নেন।

একই বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল মালেক বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ীর ব্যাপারে কয়েকদিন আগে রাতে আমাকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার বাসভবনে ডেকে নিয়ে সহি করতে বলে এবং জোর করে সহি করিয়ে নেয়। সেসময় তার বাসায় বাহিরের বেশ কয়েকজন লোক থাকায় আমি সহি করতে বাধ্য হই।

একই বিষয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার আবুল বাসার এমপি নিক্সন চৌধুরীর উদ্দেশ্যে বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ির ব্যাপারে সে আমাদের নেত্রী স্থানীয় পর্যায় কারো সাথে আলাপ করে নাই। তার সমমনা কয়েকজনকে সে বাড়ি দেওয়ার পায়তারা করছে।

তিনি আরো বলেন, ভাঙ্গা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের একাধিক দোকান ভাড়ার জামানত হিসাবে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার কোন হদিসই আমরা পাচ্ছিনা। বিষয়টি আপনি সহ যথাযথ কর্তৃপক্ষ জরুরী সমাধান দিবেন বলে আশা করেন তিনি।

এছাড়াও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা ইসাহাক মোল্লা অনেকটা আক্ষেপ করে বলেন, ভাঙ্গা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে প্রায় ২ হাজার এতিম শিশু পড়াশুনা করে। এর জন্য প্রতি বছর সেখানে ২ কোটি টাকার ও বেশী খরচ হয়। মাদ্রাসার সামনের একটি জায়গা যেটা যুগ যুগ ধরে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ভোগ করে আসছে। বর্তমান সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল আমিন মিয়া উক্ত জায়গা বিভিন্ন জনের কাছে লিজ দেওয়ার নাম করে জনপ্রতি ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পায়তারা করছে। সে একটি ফরম ছেড়ে তার ড্রাইভারকে দিয়ে উক্ত টাকা সংগ্রহ করছে। মাদ্রাসার এতিম অসহায়দের বাচাতে মাননীয় এমপি মহোদয় সহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস,এম হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজী রবিউল ইসলাম, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সফিকুর রহমান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডাক্তার মহসিন ফকির, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ, প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা, সংবাদকর্মী প্রমুখ।

ইত্তেফাক/বিএএফ