হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নব নির্বাচিত আমীর, শায়খুল হাদীস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন, কাদিয়ানীরা অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ন্যায় নিজেদের ধর্ম পরিচয়ে এদেশে বাস করলে কোন আপত্তি নেই। তিনি বলেন, কাদিয়ানীরাই বিশ্ব নবীজির বড় শত্রু। তিনি কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম(কাফের) ঘোষণা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই সাথে বাবুনগরী ‘মদীনা সনদে’র আলোকে দেশ পরিচালনা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি মদিনা সনদের সাথে সাংঘর্ষিক কোন কাজ শক্ত হাতে দমনেরও পরামর্শ দেন ।
ফ্রান্সে রাষ্ট্রীয় মদদে মহানবী (সা.) এর ব্যঙ্গ চিত্র প্রদর্শনের প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম সিলেটের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। শনিবার সন্ধ্যায় নগরীর রেজিস্ট্রারী মাঠে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা শায়খুল হাদীস আল্লামা জিয়া উদ্দীনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেন। বেলা ২টা থেকে সামবেশ শুরু হলেও আগে থেকেই জমায়েত শুরু হয়।
হেফাজতের আমির আরো বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এরই মধ্যে কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করেছে। কাজেই, ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে কাদিয়ানীদেরকে কাফের ঘোষণায় কোন সমস্যা থাকার কথা নয়।
হেফাজত বাঘও নয়, সিংহও নয়-উল্লেখ করে বাবুনগরী বলেন, সংগঠনটি সরকার বিরোধী নয়, আবার সরকার দলীয়ও নয়। নামাজ, রোজা, হজ্জ-যাকাত হলো হেফাজতের কর্মসূচি। হেফাজত বাংলাদেশে নামাজ কায়েম করতে চায়। যারা ইসলামের শত্রু, রাসূলের দুশমন;নাস্তিক-মুর্তাদদের কবর রচনার জন্য হেফাজতে ইসলামের অভ্যুদয়।
তিনি বলেন, বিশ্বের ২’শ কোটি মুসলমানের ভালোবাসার প্রতীক রাসূল (সা.) এর বিরুদ্ধে ফ্রান্স সরকার ব্যঙ্গ করে, কটাক্ষ করে মুসলমানদের কলিজায় আগুন লাগিয়েছে। রাসূলের অপমানের মোকাবেলায় রক্ত সাগর ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে বলে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা নূর হুসাইন কাসিমী,নায়েবে আমীর অধ্যাপক ড. আহমদ আবদুল কাদের, উপদেষ্টা শায়খুল হাদীস আল্লামা মুফতী রশিদুর রহমান ফারুক বর্ণভী, শায়খুল হাদীস আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক আকুনী, নায়েবে আমীর শায়খুল হাদীস আল্লামা নূরুল ইসলাম খান সুনামগঞ্জী,সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকীব ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন।
সমাবেশের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, সমাবেশের আহ্বায়ক প্রিন্সিপাল হাফিজ মাওলানা মজদুদ্দিন আহমদ। বক্তব্য রাখেন সমাবেশের অপর আহ্বায়ক মাওলানা মুহিউল ইসলাম বুরহান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব শায়খুল হাদীস আল্লামা নূর হোসাইন কাসিমী সংসদে অবিলম্বে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব আনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, শায়খুল হাদীস মুফতী মুজিবুর রহমান,শায়খুল হাদীস মাওলানা আউলিয়া হোসাইন,মাওলানা শায়খ আবদুল বাসির,মহানগর হেফাজত নেতা হাফিজ মাওলানা নূরুজ্জামান,মাওলানা খলিলুর রহমান, অধ্যাপক বজলুর রহমান,জেলা হেফাজত নেতা মাওলানা ইকবাল হোসাইন,মাওলানা আহমদ বেলাল, মাওলানা গাজী রহমতুল্লাহ, হাফিজ আবদুর রহমান সিদ্দিকী, মুফতী ফয়জুল হক জালালাবাদী, মাওলানা নাসির উদ্দিন, কারী মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, মাওলানা আতাউর রহমান কোম্পানিগঞ্জী, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, মাওলানা খলিলুর রহমান, মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, মাওলানা আহমদ সগীর, মওলানা ইউসুফ খাদিমানী, মাওলানা মুখলিছুর রহমান, মাওলানা হাবীব আহমদ শিহাব, মাওলানা এমদাদুল্লাহ, মাওলানা সাইফুল্লাহ, মাওলানা কাজী আবদুল ওয়াদুদ, মাওলানা শাহ মমশাদ আহমদ,মাওলানা আবদুল মালিক কাসিমী,মাওলানা শামসুদ্দিন মুহাম্মদ ইলিয়াসসহ শতাধিক আলেম।
সমাবেশ উপলক্ষে সিলেট নগরীতে যোহরের পর থেকে লোকজন রেজিস্ট্রারী মাঠে আসতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে রেজিস্ট্রারী মাঠ ছাপিয়ে পার্শ্ববর্তী রাস্তায়ও মানুষের ঢল দেখা যায়। সমাবেশে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে সংসদে নিন্দা প্রস্তাব পাস, সিলেটে হোটেলসমূহে মদের অনুমোদন বাতিল ও মাদকের অবাধ ছড়াছড়ি বন্ধ ও রায়হান হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি সম্বলিত ৩ দফা দাবি পেশ করা হয়। এদিকে সমাবেশকে ঘিরে শনিবার কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ।
ইত্তেফাক/এএএম