বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শুল্কায়ন দ্রুত করতে অগ্রগতি নেই চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের

আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০২০, ০৭:০৪

শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা এবং এর ফলে ব্যবসায়ের ব্যয় বেড়ে যাওয়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চললেও সাম্প্রতিক বছরগুলোর বিবেচনায় এতে প্রত্যাশিত অগ্রগতি হয়নি দেশের প্রধান শুল্ক অফিস চট্টগাম কাস্টম হাউজের। খোদ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক বিভাগের সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। তবে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে ঢাকা কাস্টম হাউজের শুল্কায়ন প্রক্রিয়া দ্রুত করার ক্ষেত্রে।

টাইম রিলিজ স্টাডি (টিআরএস) নামে এনবিআরের শুল্ক বিভাগ বছর বছর শুল্ক স্টেশনগুলোর কার্যক্রম মূল্যায়নের লক্ষ্যে এ ধরনের জরিপ করে থাকে। সর্বশেষ চলতি বছরের শুরুতে এ ধরনের একটি জরিপ করা হয়। তাতে দেখা যায়, ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বরের জরিপের যে অগ্রগতি ছিল, এখনো প্রায় সেই অবস্থানেই রয়েছে চট্টগ্রাম শুল্ক স্টেশনের শুল্কায়ন ও পণ্য খালাসের সময়।

এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের টিআরএস অনুযায়ী আমদানি পণ্যের বিল অব এন্টি দাখিলের পর দিনে দিনে শুল্কায়ন সম্পন্ন হয়েছে ৪৫ শতাংশ আমদানি পণ্যে। চলতি বছরের শুরুতে করা টিআরএস অনুযায়ী, শুল্কায়ন হচ্ছে ৪৩ শতাংশ পণ্যের। অর্থাত্ দিনে দিনে পণ্য শুল্কায়নে অগ্রগতির তুলনায় বরং কিছুটা পিছিয়ে গেছে। অন্যদিকে ২০১৮ সালের টিআরএস অনুযায়ী, ঢাকা কাস্টম হাউজে বিল অব এন্ট্রি দাখিলের পর দিনে দিনে শুল্কায়ন সম্পন্ন হয়েছিল ৫১ শতাংশ আমদানি পণ্যের। চলতি বছরের টিআরএস অনুযায়ী তা ৬৩ শতাংশ। আমদানিকৃত পণ্যবাহী জাহাজ বন্দরে আসার পর বিল অব এন্ট্রি দাখিলের পর থেকে শুল্কায়ন পর্যন্ত সময়টি শুল্ক বিভাগের দায়িত্বের মধ্যে থাকে। এনবিআর কেবল এই অংশের জন্য টিআরএস এর মূল্যায়ন করেছে। তবে আমদানিকৃত পণ্য বন্দরে আসার পর বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং আমদানিকারকের বিষয়ও বিবেচনায় থাকে।

সূত্র জানিয়েছে, বন্দরে পণ্য আসার পর তা খালাস পর্যন্ত বাংলাদেশে যে সময় ব্যয় হয়, তাতে পৃথিবীর অন্যান্য প্রতিযোগী দেশের তুলনায় এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০১২ সালে এ বিষয়ে বিস্তারিত জরিপ চালিয়েছিল এনবিআর। তাতে দেখা যায়, আমদানিকৃত পণ্য বন্দর থেকে খালাসে বাংলাদেশে গড়ে সময় ব্যয় হয় প্রায় ১২ দিন। আর রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণে পাঁচ দিনের বেশি। এ কারণে উদ্যোক্তাদের সময় ও ব্যয় দুটোই বেড়ে যাচ্ছে। ফলে পিছিয়ে যাচ্ছে ব্যবসা সহজ করার বৈশ্বিক সূচকেও।

ইস্যুটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অনেক আলোচনা চলছে। বন্দর ও শুল্কায়ন প্রক্রিয়া আধুনিকায়ন করলে এই সময় অনেক কমে আসবে বলেও বলা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তায় শুল্ক আধুনিকায়নে একাধিক প্রকল্প চলমান থাকলেও তাতে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি নেই।

আরো পড়ুন: 

শিল্পোদ্যোক্তা ও বিকেএমইএর পরিচালক ফজলে শামীম এহসান ইত্তেফাককে বলেন, বন্দরে পণ্য খালাসে দেরি হওয়ার কারণে আমরা বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়ছি। সিঙ্গাপুরের কথা বাদই দিলাম, প্রতিযোগী ভারত, শ্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনামের পণ্য খালাস প্রক্রিয়ায় আমাদের চেয়ে অনেক দ্রুত হয়। এ বিষয়ে দেশে কাজের চেয়ে কথা হচ্ছে বেশি। দেশের আমদানি রপ্তানির ৮০ শতাংশের বেশি সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে। এনবিআরের টিআরএস অনুযায়ী, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে এখনো ৮৪ শতাংশ পণ্য শুল্কায়ন সম্পন্ন হতে চার দিন সময় লেগে যায়। দুই বছর আগে তা ছিল ৮৩ শতাংশ পণ্য। অর্থাত্ এখনো ১৬ শতাংশ পণ্য শুল্কায়নে চার দিনের বেশি সময় লেগে যায়।

সূত্র জানায়, মূলত আমদানিকৃত পণ্যে মিথ্যা ঘোষণার প্রবণতা বেশি থাকা, পণ্যের পরিচিতি নম্বর বা এইচএস কোডের জটিলতায় অনেক সময় শুল্কায়নে দেরি হয়।

এনবিআরের শুল্ক বিভাগের একজন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, কয়েক বছর আগে থেকে বাস্তবায়ন হওয়া এসাইকুডা ওয়ার্ল্ড (অনলাইন শুল্কায়নের পদ্ধতি) বাস্তবায়ন হওয়ার পর শুল্কায়নে অগ্রগতি হয়েছে। চলমান শুল্ক আধুনিকায়ন বাস্তবায়ন হওয়ার পর এতে আরো অগ্রগতি হবে।

ইত্তেফাক/এএএম