শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার নববধূ হাসপাতালে

আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০২০, ১৪:২৯

নওগাঁর রাণীনগরে হাত থেকে বিয়ের মেহেদীর রঙ মুছতে না মুছতেই যৌতুক নির্যাতনের শিকার হয়েছে নববধূ উম্মে কুলছম (১৮) নামের এক কলেজ পড়ুয়া মেয়ে।বিয়ের ২২দিনের মাথায় শ্বশুর, শাশুড়ি ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মারপিটের চিহ্ন নিয়ে বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শয্যায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন উপজেলার কনৌজ গ্রামের সামছুল ইসলামের মেয়ে কুলছুম। 

এদিকে, হাসপাতালে ভর্তির সপ্তাহ পার হলেও এখন পর্যন্ত কুলছুমের স্বামী কিংবা ওই পরিবারের কোনো সদস্যই কুলছুম দেখতে আসেনি এবং কোনো খোঁজ খবরও নেয়নি।

নববধূ কুলছুম জানায়, সে বর্তমানে রাণীনগর শের-এ বাংলা সরকারি মহাবিদ্যালয়ে এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। গত অক্টোবর মাসের ২৫তারিখে একই গ্রামের আক্তারের ছেলে রাসেলে সঙ্গে পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়। বিয়ের সময় লেনদেন কোন কথা ছিলো না। কিন্তু বিয়ের ১৫দিন পার হতে না হতেই ফুফা শ্বশুড় ময়েজের নেতৃত্বে স্বামী রাসেল, তার মা, বাবা ও বোন বাবার বাড়ি থেকে আমাকে যৌতুক হিসেবে ৩লাখ টাকা নিয়ে আসতে বলে। এরপর থেকে তারা আমাকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতনের পাশাপাশি মারপিট করতে শুরু করে। 

চলতি মাসের ১৬তারিখে তার শ্বশুর, শ্বাশুড়ি ও ননদ কুলছুমকে কোনো কারণ ছাড়াই ৩লাখ টাকার কোনো ব্যবস্থা না করার অপরাধে এলোপাতারি ভাবে মারপিট করতে থাকে। মারপিটের এক পর্যায়ে কুলছুম জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এরপর খবর পেয়ে কুলছুমের বাবা সামছুল ইসলাম মেয়েকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করিয়ে দেয়। এরপর থেকে শরীরে যৌতুকের মারপিটের ক্ষত-বিক্ষত চিহ্ন নিয়ে কুলছুম হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে আছে। কুলছুম আরো জানান ইতিমধ্যেই তার  স্বামীকে অন্য এক জায়গায় বিয়ে দেওয়ার পায়তারাও করছে তার শ্বশুর, শ্বাশুড়ি ও ময়েজ উদ্দিন। আমি রাসেলে সংসার করবো কিন্তু তার পরিবারের সদস্যরা যৌতুকের কারণে আমাকে অন্যায় ভাবে যে মারপিট করেছে তার সুষ্ঠু বিচার চাই। আর আমার বাবা গরীব। আমার বাবা যৌতুকের এতোগুলো টাকা কোথায় পাবে? তারা যদি সময় দিতো তাহলে হয়তো বা আমার বাবা একটু চেষ্টা করতো।

কুলছুমের বাবা সামছুল ইসলাম বলেন, আমি অসহায় মানুষ। দিনমজুরের কাজ করে খাই। বিয়ের সময় যদি তারা আমাকে যৌতুকের কথা বলতো তাহলে আমি সেই ভাবে আমার মেয়েকে বিয়ে দিতাম। আর তারা আমাকে বলবে কত টাকা লাগবে? কিন্তু আমার মেয়েকে যেভাবে তারা মারপিট করেছে আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। আমি বিষয়টি রাণীনগর থানায় মৌখিক ভাবে জানিয়েছি। পুলিশ বলেছে, মেয়ে সুস্থ হওয়ার পর থানায় নিয়ে আসতে। তারা অনেক প্রভাবশালী। তাই আমি আইনের আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য ভয় পাচ্ছি।
 
এই বিষয়ে কুলছুমের স্বামী রাসেলকে তার ফোনে একাধিকবার ফোন দিলে রিসিভ করে কোনো কথা বলেনি। তাই এই বিষয়ে রাসেলের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। 

রাণীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম বলেন, আমাকে বিষয়টি মেয়ের বাবা মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। কিন্তু লিখিতভাবে কোনো অভিযোগ দেয়নি। লিখিতভাবে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ইত্তেফাক/কেকে