কানাডায় বসবাসকারীদের একটি বিরাট অংশ চট্টগ্রামের বাসিন্দা। এদের অধিকাংশই গত কয়েক বছরের মধ্যে কানাডা পাড়ি জমিয়েছেন বলে জানা গেছে। কানাডা প্রবাসী ঐসব পরিবারের বেশির ভাগের ক্ষেত্রে পরিবারের কর্তাব্যক্তিগণ কানাডায় স্থায়ী বসবাস করেন না। বিনিয়োগ ক্যাটাগরিতে যাওয়া ঐসব ব্যক্তির স্ত্রীসহ ছেলেমেয়েরা কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করলেও মূল বিনিয়োগকারী দেশে যাওয়া-আসার মধ্যে থাকেন।
সূত্র জানায়, ছেলেমেয়েদের কানাডায় শিক্ষার ভর্তি ও ব্যয়নির্বাহের জন্য যে টাকা পাঠানো হয় তার বিরাট অংশ অবৈধ চ্যানেলে পাঠানো হয়ে থাকে। এর ফলে ব্যবসায়ী, সরকারি আমলা এবং জনপ্রতিনিধিদের শিক্ষা ব্যয়ের নামে বিশাল পরিমাণ টাকা ছাত্রছাত্রীদের কানাডার অ্যাকাউন্টে জমা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, কানাডায় চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের বিনিয়োগকারী ক্যাটাগরিতে যাওয়া ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগ ঐ দেশে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় নিয়োজিত। কানাডায় যাওয়া পরিবারসমূহের অনেকেই কোনো প্রকার কাজ বা ব্যবসা না করলেও বিলাসবহুল জীবনযাপন করতে দেখা যায়। কারণ তাদের অর্থের মূল যোগান দেশ থেকে হয়ে থাকে।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিল্প গ্রুপের মালিক ও পরিচালক, বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালক, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী, ল্যান্ড ডেভেলপার, ব্যাংকের ঋণখেলাপি, শিপব্রেকিং ইয়ার্ডের মালিক, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ ও তাদের পরিবার কানাডায় স্থায়ী বাসিন্দা। আবার অনেকে তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য প্রথমে কানাডার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠান। কয়েক বছরের মাথায় সন্তানদের রেসিডেন্স পারমিট (পিআর) পাওয়ার পর পরিবারের অন্য সদস্যরাও বিভিন্ন ক্যাটাগরির মাধ্যমে কানাডা পাড়ি দেন।
কানাডায় অন্তত পাঁচটি ক্যাটাগরিতে যাওয়া যায়। একমাত্র বিনিয়োগকারী ক্যাটাগরি ছাড়া অন্য সব ক্যাটাগরিতে আইইএলটিএস (ইংরেজি দক্ষতা) সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়। বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে যেমন ল্যাংগুয়েজ দক্ষতার প্রয়োজন পড়ে না একইভাবে বিনিয়োগকারী তার স্ত্রীসহ নির্দিষ্ট বয়সের ছেলেমেয়েদের একই সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন। তাই চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের একটা অংশের মধ্যে বিনিয়োগকারী হিসেবে কানাডায় পাড়ি দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কনসালট্যান্ট জানান, চট্টগ্রাম থেকে বিনিয়োগকারী ক্যাটাগরিতে বেশি লোক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কানাডায় পাড়ি দিয়েছেন। চট্টগ্রামের বাসিন্দা ঐ কনসালট্যান্ট নিয়মিত কানাডায় যাওয়া-আসা করেন। তিনি জানান, এখানে টাকা ছাড়া অন্য তেমন ঝামেলা না থাকায় চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ ক্যাটাগরিতে কানাডায় যাওয়ার ক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
সূত্র আরো জানায়, চট্টগ্রাম থেকে যাওয়া বেশির ভাগ লোক ঐ দেশের ভাতার ওপর নির্ভর করে না। সংশ্লিষ্ট এক ইমিগ্রেশন কনসালট্যান্ট জানিয়েছেন, চার/পাঁচ বছর পূর্বে যেখানে বিনিয়োগকারী ক্যাটাগরিতে এক কোটি থেকে দেড় কোটি টাকায় যাওয়া যেত। বর্তমানে আড়াই কোটি থেকে তিন কোটি টাকা প্রয়োজন হয়। অনেকে সামাজিক নিরাপত্তা, সন্তানের শিক্ষা কিংবা অবসরকালীন সময় নিরাপদে কাটানোর লক্ষ্য নিয়ে কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিচ্ছেন বলে তিনি জানান।
ইত্তেফাক/ইউবি