বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর করোনা

বিপর্যয়ের মুখে সাতক্ষীরা অঞ্চলের চিংড়িচাষিরা

আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০২০, ০৪:৫৭

একের পর এক ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস আর করোনা সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সাতক্ষীরা জেলার চিংড়িচাষিরা। এক বছরের মধ্যে দুই দফায় সামুদ্রিক ঝড় আর সম্প্রতি নিম্নচাপ-লঘুচাপের প্রভাবে ভারি বৃষ্টিপাত এবং প্রবল জোয়ারের প্লাবনে এখানকার চিংড়িচাষিদের মাছ ভেসে গিয়ে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে চিংড়ি রপ্তানিতে ধস ও বাজারমূল্য কমে যাওয়ায় এ খাতের সঙ্গে জড়িতরা চরম দুরবস্থার মধ্যে রয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুন্দরবন উপকূলীয় আশাশুনি ও শ্যামনগরের বেশির ভাগ এলাকায় বছরের অধিকাংশ সময়ই বাগদা চিংড়ির চাষ হয়ে থাকে। অবশ্য খুব স্বল্পপরিসরে গলদা চিংড়ির সঙ্গে অন্যান্য মাছ চাষও সাম্প্রতিককালে শুরু হয়েছে। লবণ আবহাওয়ার কারণে এখানে ধান ও অন্যান্য ফসল ভালো উত্পাদন না হওয়ায় স্থানীয়রা সাধারণত চিংড়ি চাষ করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা গ্রামের চিংড়িচাষি রহমত গাজী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস আর করোনা সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। বর্তমান সময়ে তার ঘেরে তেমন একটা মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। সব মাছ ভেসে গেছে। একই গ্রামের রমজান আলী নামের আরেক চিংড়িচাষি বলেন, ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ ভেঙে তারসহ অধিকাংশ ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। এর ওপর আবার রয়েছে করোনার প্রভাব।

বছরের শুরুতে সামুদ্রিক ঝড় বুলবুল আর মধ্যে পথে এসে আম্ফানের আঘাত এবং সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ ও লঘুচাপের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে এখানকার হাজার হাজার ঘের তলিয়ে ভেসে গেছে লাখ লাখ টাকার চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। চিংড়ি ব্যবসায়ী দীনবন্ধু মিত্র বলেন, ‘করোনার চলমান পরিস্থিতিতে চিংড়ি মাছের বাজারমূল্য কমে দাঁড়িয়েছে চার ভাগের এক ভাগ। খামারে বাগদা চিংড়ি চাষ করা হয়। কিন্তু চিংড়ির দাম কমতে থাকায় ন্যায্যমূল্য না পেয়ে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’ খেতে লোনা পানি ধরে এভাবে চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ চাষ করা হয়ে থাকে। শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মোড়ল বলেন, ‘বাগদা চাষের মৌসুমের শুরুতেই প্রান্তিক চাষিরা হোঁচট খেতে শুরু করেন। এপ্রিল-মে মাসে করোনার লকডাউনে হ্যাচারিগুলো বন্ধ থাকায় রেণু পোনার চরম সংকট দেখা দেয়। এছাড়া চাষিরা স্থানীয় নদনদীর প্রাকৃতিক চিংড়ি পোনাও আশানুরূপ পাননি।

জেলা মৎস কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান জানান, জেলায় এ বছর ৭৬ হাজার হেক্টর জমিতে ৬৬ হাজার ঘেরে চিংড়ি চাষ হয়েছে। যেখানে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪১ হাজার টন কিন্তু উৎপাদন হয়েছে ৩৮ হাজার টন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও করোনার প্রভাবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি বলে তিনি জানান। এদিকে বেসরকারি হিসাবে চিংড়ি ঘের ও প্রান্তিক চাষির সংখ্যা লক্ষাধিক। এছাড়া বিভিন্ন পুকুরেও মাছ চাষ করা হয়ে থাকে। এর পরও যে পরিমাণ চিংড়ি উৎপাদন হয়, তা আবার করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে বিদেশে রপ্তানি করতে না পারায় ঘের ও মত্স্যচাষে জড়িতরা এখন বিপর্যয়ের মুখে রয়েছেন।

ইত্তেফাক/জেডএইচডি