রংপুরে প্রথম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিচার পরিচালনা করে এক যুবকের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। মৃত্যুদণ্ডাদেশ ছাড়াও এক লাখ টাকা জরিমানা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। অপর ব্যক্তি এক নারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস দিয়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক মোস্তফা পাভেল রায়হান এ রায়ের আদেশ দেন। রায় ঘোষণার সময় অভিযুক্তরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালত চত্ত্বরে প্রজেক্টর এর মাধ্যমে উপস্থিত জনতাকে রায় পড়ে শোনান বিচারক। রায় শুনতে আদালত চত্ত্বরে জনতার উপচে পড়া ভিড় ছিলো।
মামলা ও আদালত সূত্রে জানা যায়, রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর গ্রামের দিনমজুর শাজাহান আলীর শিশু কন্যা তানজিলা খাতুন চুমকি স্থানীয় দুরামিঠিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। ঘটনার দিন ২০১৬ সালের ১৪ জুন বিকেলে বাড়ির পাশে খেলছিল চুমকি। এসময় প্রতিবেশী মমিন প্রধানের ছেলে রিয়াদ প্রধান (তৎকালীন বয়স ২০) আম খাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ওই শিশুটিকে নিজ বাড়িতে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। এসময় মেয়েটি চিৎকার দিলে ধরা পড়ার ভয়ে আসামি রিয়াদ তাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর সহযোগী আসামি ওই বাড়ির গৃহকর্মী ধলি বেগমের (তৎকালীন বয়স ৫০) সহায়তায় সিমেন্টের বস্তায় ভরে খাটের নিচে মাটি খুঁড়ে পুঁতে রাখে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলেও মেয়ে বাড়িতে না আসায় পরিবারের সদস্যদের মাঝে উদ্বিগ্ন বাড়তে থাকে। সন্তানের খোঁজে ওই দিন রাত থেকে এলাকায় মাইকিং করা হয়। একপর্যায়ে ১৭ জুন সকালে পীরগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই বাড়ির খাটের নিচ থেকে চুমকির মরদেহ উদ্ধারসহ আসামি রিয়াদকে গ্রেফতার করেন। ঘটনার পর পালিয়ে যায় ধলি বেগম। বেশ কিছুদিন পর ঢাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আরো পড়ুন: বড়াইগ্রামে স্ত্রী হত্যা মামলায় স্বামীর মৃত্যুদণ্ড
ঘটনার তদন্ত শেষে ওই বছরের ১২ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। গত ৩০ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে মামলার চার্জগঠন করা হয়। ৪ বছর বিচারাধীন থাকার পর ১৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণের পর মঙ্গলবার এর রায় ঘোষণা করেন বিচারক। এতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ছাড়াও এক লাখ টাকা জরিমানা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কাওছার আলী সন্তুষ্ট প্রকাশ করে বলেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে জনতার উপস্থিতে রায় ঘোষণা। এটি রংপুরে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন। দ্রুত রায়টি কার্যকরের দাবি জানান তিনি।
নিহত চুমকির মা সুফিয়া খাতুনসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা রায়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করেন।
ইত্তেফাক/এএএম